চাকরির ক্ষেত্রে যে দক্ষতা দিন দিন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে

প্রতিযোগিতা যত বাড়ছে, তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে যোগাযোগের দক্ষতা। ডিগ্রি আছে, ভালো ফল আছে, তবু কেবল এই দক্ষতার অভাবে অনেকে পিছিয়ে পড়ছেন। কীভাবে যোগাযোগ শেখার প্রতি মনোযোগ দেবেন? জানিয়েছেন গ্রামীণফোন একাডেমির প্রধান ফারহানা হোসেন

যোগাযোগের দক্ষতা আপনাকে চাকরি বা পেশাজীবনে এগিয়ে রাখবে
ছবি: পেক্সেলস

১. মনোযোগ সহকারে শোনা

এটি কার্যকর যোগাযোগের ভিত্তি। সক্রিয়ভাবে শোনা মানে কিন্তু কেবল কথা শোনা নয়; মনোযোগ দিয়ে বক্তার বার্তা, অনুভূতি ও বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করা। বক্তার কথায় মনোযোগ দিন, প্রশ্ন করুন। দেখান যে আপনি তাঁর মতামতকে মূল্য দিচ্ছেন। উল্টো দিকে বসে একজন কথা বলছেন, আর আপনি একটু পরপর মুঠোফোন স্ক্রল করছেন, এমনটা যেন না হয়।

২. সংক্ষেপে স্পষ্ট করে বলা

ব্যস্ত কর্মজীবনে সময় খুব মূল্যবান। সফল কর্মীরা তাদের ধারণাগুলো সহজ, স্পষ্ট ও সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রকাশ করেন। ই–মেইল, মিটিং বা প্রেজেন্টেশনের সময় অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা বিশদ বর্ণনা পরিহার করে মূল বিষয় দ্রুত তুলে ধরার চেষ্টা করুন। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই স্পষ্টভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করতে শিখুন। টানা তিন মাস পেশাদার ইংরেজি ভাষা চর্চা করলে দ্রুত কথা বলা আয়ত্ত করতে পারবেন।

৩. শরীরী ভাষা

আপনার অঙ্গভঙ্গি, চোখের ভাষা, বসা বা দাঁড়ানোর ভঙ্গি প্রায়ই কথার চেয়েও বেশি কিছু বলে দেয়। ইতিবাচক শরীরী ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে। আপনার বার্তাকে আরও শক্তিশালী করে। ধরুন, প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় আপনি শ্রোতার পায়ের দিকে কিংবা দূরে কোথাও তাকিয়ে আছেন। তিনি কি আপনার বক্তব্য মন দিয়ে শুনবেন?

৪. লেখার শক্তি

অনেকেই এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে লেখালেখি করেন। এভাবে লেখালেখির চর্চা মন্দ না। তবে নিজের স্বকীয়তা যেন হারিয়ে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। ই–মেইল বা লিংকডইনের মতো অন্য সব মেসেজিং প্ল্যাটফর্মেই স্পষ্ট ও পেশাদারভাবে লিখতে পারা জরুরি। নির্ভুল বানান, বিনয়ী ও সহজে পঠনযোগ্য লেখা আপনার পেশাদারত্ব নিশ্চিত করে।

৫. গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া

নিজে যেমন সব সময় গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানাবেন, তেমনি অন্যের প্রতিক্রিয়াও খোলামনে গ্রহণ করা শিখতে হবে। সফল কর্মীরা অন্যের প্রতিক্রিয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে না দেখে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখেন। অন্যের মত যদি গ্রাহ্য না-ই করেন, তাহলে ধীরে ধীরে মানুষ আপনার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই দলীয় কাজের ক্ষেত্রে এই চর্চাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

৬. সহানুভূতিশীল থাকা

সহানুভূতির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এ ক্ষেত্রে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স) ব্যবহার করতে হবে। পরিস্থিতি যা-ই হোক, অপর পক্ষের চোখেও বিষয়টি দেখার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে বন্ধু, সহকর্মী বা ক্লায়েন্টদের সঙ্গে শক্তিশালী ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করবে; বিশেষ করে কঠিন আলোচনা বা সংঘাতের সময়।

৭. সঠিক উপস্থাপন

ধরা যাক, আপনি কোনো বিনিয়োগকারী বা অফিসের বড়কর্তার সঙ্গে লিফটে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন। লিফট কাঙ্ক্ষিত তলায় পৌঁছাতে এক থেকে দুই মিনিট নেবে। এর মধ্যেই আপনার কোনো একটি আইডিয়া বা ধারণা সেই বিনিয়োগকারী বা বড়কর্তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কীভাবে বলবেন? একেই বলে ‘এলিভেটর পিচ’। আপনাকে সঠিকভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা শিখতে হবে।