কর্মস্থলে পেশাগত আর ব্যক্তিগত সম্পর্কের সীমানা মেনে চলা ভালো। তবে সব সময় কি সেটা মানা হয়? কর্মস্থলে পেশাদার আচরণের কিছু অলিখিত নিয়ম আছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সময়নিষ্ঠা হলো পেশাদারত্বের প্রথম নির্দেশক। সঠিক সময়ে অফিসে আসা, মিটিংয়ে যাওয়া, কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চলা, সময়মতো সহকর্মীদের কাজের দিকনির্দেশনা দেওয়া, এ সবই সময়নিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত। এসব আপনাকে অন্যদের সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। সময়ের কাজ সময়মতো না করলে পেশাদারত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তাই কোনো কারণে যদি মিটিংয়ে উপস্থিত হতে দেরি হয়, আগেই সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে আপনার উপস্থিতির সম্ভাব্য সময় সবাইকে জানিয়ে রাখুন, আবার কর্মপরিকল্পনা তৈরি করুন।
যথার্থ যোগাযোগ যেকোনো অফিসের জন্যই জরুরি। অফিস মেইলের ভাষা হবে স্পষ্ট, সহজ ও পেশাদার। আপনার সহকর্মীরা যেন সহজেই বুঝতে ও দ্রুত তার জবাব দিতে পারেন। আবেগপ্রবণ কোনো কিছু না লিখলেই ভালো। মিটিংগুলোয় খুবই অর্থবহভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আপনাকে হতে হবে মনোযোগী শ্রোতা, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বক্তা। মনোযোগ ধরে রাখার জন্য চাইলে ছোট ছোট নোট নিতে পারেন।
পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পেশাদারত্বকে প্রাধান্য দিতে হবে। পোশাক হতে হবে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন, সর্বজনীনভাবে উপযুক্ত। অগোছালো ও অপরিষ্কার পোশাক না পরাই ভালো। এমন পোশাক পরুন, যা আপনার কাজে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে।
গবেষণায় দেখা যায়, পরিচ্ছন্ন কর্মপরিবেশ ব্যক্তির মনোযোগ, কাজের গতি ও মান বাড়াতে সহায়তা করে। এটি ব্যক্তিত্বেরও পরিচায়ক। নিজের কাজের ডেস্ক, ফাইল, টেবিল, গুছিয়ে রাখা উচিত। এতে প্রয়োজনের সময় সহজেই যেকোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। বাড়তি চাপও নিতে হয় না। এ ছাড়া অফিসের বিশ্রাম করার জায়গা, রান্নাঘর, এমনকি বাথরুম সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা প্রয়োজন। পরের জন এসব ব্যবহারে যেন অসুবিধায় না পড়েন।
ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও পেশাগত সৌজন্যের মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি। খুব দরকার না পড়লে কাজের মধ্যে ব্যক্তিগত ফোনের উত্তর দেওয়া বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে প্রয়োজন বিশেষে, সব দিক বিবেচনা করে অফিস রুম থেকে একটু দূরে গিয়ে সংক্ষেপে কথোপকথন সেরে ফেলতে পারেন। অন্য সহকর্মীদের বিরক্তির কারণ হতে পারে এমন সব কাজ, যেমন উচ্চৈঃস্বরে গান শোনা বা ফোনে কথা বলা ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
অফিসের কর্মীদের পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহযোগী মনোভাব বজায় রাখা দরকার। অফিস কর্মঘণ্টার বাইরে সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ–বিষয়ক কোনো যোগাযোগ করা উচিত নয়; কিন্তু জরুরি কোনো কাজ হলে ব্যক্তিগত সময়ের প্রতি সম্মান রেখে অবশ্যই সংক্ষেপে ই–মেইল বা মেসেজ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কখনোই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করবেন না৷ এ ছাড়া সহকর্মীর কাছ থেকে কিছু ধার করার আগে অবশ্যই তাঁর অনুমতি নেবেন। কাজ শেষ করেই দ্রুত ফেরত দিয়ে দেবেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়াতে ব্যক্তিগত জিনিসগুলোয় লেবেল লাগিয়ে নিতে পারেন।
অফিসের সর্বজনীন জায়গাগুলো সব সময় দায়িত্ব নিয়ে ব্যবহার করবেন। সর্বজন ব্যবহৃত জায়গাকে ব্যক্তিগত জায়গা বানিয়ে ফেলা, ডাস্টবিনগুলোয় ব্যক্তিগত আবর্জনা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রাখা, এসব অভ্যাস আপনার ব্যাপারে অফিসে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। একইভাবে অফিসের প্রিন্টার, ওভেন বা কফি মেশিনে একচেটিয়া অধিকার খাটানোর অভ্যাস থাকলে সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
আপনার কোনো সহকর্মী হয়তো কোনো কাজ বা উপস্থাপনা নিয়ে অনেক সমস্যায় আছেন। আপনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, ‘তোমার কাজে আমি কি সাহায্য করতে পারি?’ এ ছাড়া দলগত কাজে দায়িত্ব নিয়ে যোগ দেওয়া উচিত। কেননা, আপনার কাজের ওপর আপনার দল নির্ভরশীল। কাজের গঠনমূলক সমালোচনায়ও আগ্রহ নিয়ে অংশগ্রহণ করুন। একই সঙ্গে কাজের সফলতায় দলের অন্য সদস্যদের পরিশ্রমকে বাহবা দিন। ‘ধন্যবাদ’ বা ‘খুব ভালো’ এসব মন্তব্য করে উৎসাহিত করুন।
কর্মপরিবেশে বৈচিত্র্য থাকবেই। অফিসের কেউ হয়তো ভোরে ঘুম থেকে উঠে চটপট কাজ সেরে ফেলতে পারেন, কেউ আবার রাত জেগে কাজ করতে পটু। তাই সবার অংশগ্রহণ ও মতামত নিয়েই কাজের পরিকল্পনা তৈরি করা ভালো।
সূত্র: টেক টার্গেট