
চেক প্রজাতন্ত্রে আয়োজিত ফিউচার পোর্ট ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫-এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের তরুণদের উদ্ভাবনী প্রকল্প ‘নির্ভয়া’। ১৩ নভেম্বর প্রাগের এক অনুষ্ঠানে নির্ভয়া প্রকল্পের দুই সদস্য মারজানা মারিয়া ও শহিদুল ইসলামের হাতে পুরস্কার হিসেবে এক হাজার ইউরো তুলে দেন আয়োজকেরা। প্রতিযোগিতায় এ বছর বিভিন্ন দেশ থেকে ২২০টির বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। মূল প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে গ্রিস, দ্বিতীয় বাংলাদেশ এবং তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়েন মারজানা মারিয়া। শহিদুল ইসলাম নর্দান ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। দলটির আরেক সদস্য বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তায়েব মৃধা, তাঁর যদিও প্রাগে যাওয়া হয়নি।
দলনেতা মারজানা মারিয়া জানান, গত বছর চা–শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা শুরু হলে তাঁদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই নির্ভয়ার যাত্রা শুরু।
নির্ভয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ভয়া আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু প্রাগে এসে নিজে প্রকল্পটি উপস্থাপন করতে পারা আমাদের সবার জন্য সম্মানের।’
মারজানা মারিয়া জানান, শুরুতে শ্রীমঙ্গলে তাঁদের পরিচিত কেউ ছিল না। পরে ফেসবুকে যোগাযোগ করে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাঁরা। সাত-আট মাস ধরে সেই নেতারাই নির্ভয়ার অধিবেশনগুলোতে মানুষকে অংশ নিতে উৎসাহিত করেন। শ্রীমঙ্গলের অধিকাংশ চা–শ্রমিক পরিবারের নারীদের এখনো মাসিকের সময় পুরোনো কাপড় ব্যবহারের প্রবণতা আছে। নারী-পুরুষ উভয়কেই নির্ভয়া দল মাসিকের সময়ের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন করেছেন। কীভাবে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে, কতক্ষণ পর পরিবর্তন করা উচিত, দীর্ঘক্ষণ ব্যবহারে কী ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়, এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তাঁরা।
চা–শ্রমিকদের কম মজুরি বিবেচনায় নিয়ে তাঁদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের পথ তৈরিতেও কাজ করছে নির্ভয়া। পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনাও করছেন তাঁরা, যাতে নারী শ্রমিকেরা সেগুলো নিজেদের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিক্রি করতে পারেন।
নির্ভয়া একই সঙ্গে একটি দ্বিভাষিক (বাইলিঙ্গুয়াল) অ্যাপও তৈরি করেছে, যা এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। চা–শ্রমিকদের প্রায় সব পরিবারেই একটি করে স্মার্টফোন থাকায় অ্যাপের ব্যবহার শেখানো সহজ হবে বলে মনে করেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অ্যাপ ব্যবহার করে নারীরা জানতে পারবেন তাঁদের মাসিক স্বাভাবিক আছে কি না, রং বা চক্রের পরিবর্তন ঠিক আছে কি না। প্রতি মাসে তাঁরা নিজেদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এআইয়ের তৈরি একটি রিপোর্টও পাবেন। পাশাপাশি অ্যাপের মাধ্যমে বিনা মূল্যে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ থাকবে।
অ্যাপের মাধ্যমে কম মূল্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সুবিধাও থাকবে। ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে এমন ন্যাপকিন পাওয়া যাবে, যা প্রায় ছয় মাস ব্যবহার করা যাবে।
নির্ভয়ার উদ্যোক্তারা মনে করেন, আন্তর্জাতিক এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের তরুণ উদ্ভাবকদের জন্য বড় অনুপ্রেরণা হবে।