কবুতর উড়িয়ে ২০টির বেশি পুরস্কার জিতেছেন খুলনার পাইকগাছার শামসুজ্জামান সিদ্দিকী। সর্বশেষ এক প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে পেয়েছেন এক লাখ টাকা। তাঁর কবুতর দেখতে গিয়েছিলেন শেখ আল-এহসান

চাচাতো ভাই নাজমুস সাদাত সিদ্দিকী কবুতর পুষতেন। নানা জাতের কবুতর। শামসুজ্জামানকেও কবুতর পুষতে উৎসাহ দিতেন তিনি। শুধু উৎসাহই নয়, ১৯৯৪ সালে তাঁকে দুই জোড়া কবুতর উপহারও দেন সাদাত। শামসুজ্জামান সিদ্দিকী তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন।
চাচাতো ভাইয়ের কাছে পাওয়া কবুতর পোষার শখ শামসুজ্জামানকেও পেয়ে বসে। দিনে দিনে বাড়তে থাকে কবুতরের সংখ্যা। তাঁর সংগ্রহে যুক্ত হতে থাকে নতুন নতুন জাত। কবুতর পোষার সেই শখ এখনো ধরে রেখেছেন শামসুজ্জামান।
২০১৪ সাল থেকে দেশি জাতের কবুতর পোষা ছেড়ে দেন শামসুজ্জামান। শুরু করেন গিরিবাজ গোত্রের কবুতর পোষা। কারণ, তত দিনে কবুতর পোষার সঙ্গে আরও একটা শখের মায়ায় পড়েছেন শামসুজ্জামান, সেটা হলো কবুতর ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। কোন ধরনের কবুতর আকাশে বেশি উড়তে পারে, নিয়মিত খোঁজখবর করতে থাকেন শামসুজ্জামান। তারপর সংগ্রহের কবুতরগুলোকে নিয়মিত আকাশে ওড়ানোর প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এভাবে চলে যায় চার বছর।
২০১৮ সাল। গোপালগঞ্জের মধুমতি হাই-ফ্লাইয়ার ফেডারেশন নামের একটি সংগঠনের কবুতর ওড়ানোর আয়োজনের খোঁজ পান শামসুজ্জামান। সারা দেশের প্রতিযোগীদের নিয়ে হবে গ্রীষ্মকালীন ওই প্রতিযোগিতা। প্রশিক্ষিত কবুতর নিয়ে প্রথমবারের মতো তাতে অংশ নেন শামসুজ্জামান। প্রথমবারেই তৃতীয় পুরস্কার এনে দেয় তাঁর গিরিবাজ প্রজাতির ভারতীয় কবুতর কালদুম। কবুতরটি ৭ ঘণ্টা ১০ মিনিট আকাশে উড়েছিল। পুরস্কার হিসেবে পান পিতলের একটি কাপ ও ৩০ হাজার টাকা।
প্রথম প্রতিযোগিতার সাফল্যে আগ্রহ বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় উড়তে পারে, এমন কবুতর সংগ্রহ করতে শুরু করেন শামসুজ্জামান। দেশের যেখানেই প্রতিযোগিতার কথা শোনেন, সেখানেই নিবন্ধন করেন। গত ডিসেম্বরে সারা দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হওয়া কবুতর নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল ‘বাংলাদেশ নাম্বার ওয়ান চ্যাম্পিয়ন’ প্রতিযোগিতা। আয়োজক খুলনার বৈকালী গিরিবাজ পালক সংগঠন। প্রথম পুরস্কার লাখ টাকা। সারা দেশের ১৭৪ জন অংশ নিয়েছিলেন। তিন মাস ধরে চলে প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় ১১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট কবুতর উড়িয়ে প্রথম হয়েছেন শামসুজ্জামান। প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় ২৭ মার্চ। তবে পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন করা হয়নি। আয়োজকেরা জানান, শিগগিরই হবে।
এখন পর্যন্ত ২৫টির মতো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রায় সব কটিতেই পুরস্কার জিতেছেন শামসুজ্জামান।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার উত্তর সলুয়া গ্রামে শামসুজ্জামানের বাড়ি। পেশায় তিনি মাছের ঘের ব্যবসায়ী। নিজেদের তিনতলা বাড়ির ছাদেই তিনটি বড় খাঁচায় কবুতরগুলো রেখেছেন। রোদ-বৃষ্টি ঠেকাতে খাঁচার ওপর দিয়েছেন ছাউনি। খাঁচা তিনটায় কবুতর আছে দুই শতাধিক। খাঁচার মধ্যে আলাদা করে কাঠের বাক্স করে থাকার জায়গা করা হয়েছে। সেখানে ডিমে তা দিচ্ছে কোনো কবুতর, কোনোটা বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। এসব দেখাশোনা করছেন একজন কর্মী।
রোজ সকালে কবুতরকে খাইয়ে আকাশে উড়িয়ে দেন শামসুজ্জামান। দিনের কাজ শেষে বাড়ি ফিরেই আবার ছুটে আসেন কবুতরের কাছে। শামসুজ্জামান বলেন, ‘কবুতর ফেলে কোথাও গিয়ে এক দিনের বেশি থাকতে পারি না।’
শামসুজ্জামানের কাছে পাকিস্তান ও দুবাইয়ের টেডি, বাটেরা ৩৫, গোল্ডেন কামাগার, ভারতের কাচমার, কালদুম, শাহরানপুর, কালমিরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর রয়েছে। এসব কবুতরের আর্থিক মূল্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা।