জীবনযাপন

ইনস্টাগ্রামে এই বিড়ালের ফলোয়ার এখন ৭ লাখ ৮২ হাজার

ছবিগুলো এত সুন্দর যে দেখে মনে হয় এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি। কিন্তু ‘রেক্সি ক্যাট’-এর ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলের ওপরে স্পষ্ট করে লেখা আছে, ‘এআই নয়, ছবিতে আমাকে এমনিই সুন্দর দেখায়।’ সত্যিই এমন একটি বিড়াল আছে! রেক্সি নামের দারুণ আমুদে বিড়ালটিকে বিচিত্র সব মুখভঙ্গিমায় দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেগুলো দেখে হেসে কুটি কুটি হন লাখো নেটিজেন। বর্তমানে ইনস্টাগ্রামে রেক্সির ফলোয়ারের সংখ্যা ৭ লাখ ৮২ হাজার। সবাইকে আনন্দ দেওয়া এ বিড়ালের জীবনেও আছে করুণ এক গল্প।

আবৃতি আহমেদ
নানা অঙ্গভঙ্গিমায় পারদর্শী রেক্সি সবার কাছে ‘জীবন্ত ইমোজি বিড়াল’।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
রেক্সির জন্ম ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বর। সে হিসাবে ২০২৪ সালে ১০ বছরে পা দিয়েছে ও। উদ্যাপন করেছে নিজের জন্মদিন।
রেক্সির দত্তক মা রাশিয়ার নাগরিক ডাশা মান্যবর। প্রাণীপ্রেমী ডাশা আগে থেকেই একটি ফেরিট বা নকুল পালতেন। বন্য প্রাণীটিকে খুব খারাপ অবস্থা থেকে উদ্ধার করেছিলেন তিনি। পরে প্রাণীটিকে নিজের কাছেই রেখে দেন। নাম দেন কেনিউ। এরপর একদিন বন্ধুর বিড়ালের অনেকগুলো ছানা হয়েছে খবর পেয়ে সেখান থেকে একটি ছানা নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। ছানাগুলো মায়ের দুধ ছাড়লে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই মাস বয়সী একটি ছানা দত্তক নেন ডাশা। নাম দেন রেক্সি।
রেক্সিকে খুব সহজেই আপন করে নেয় কেনিউ। তাদের একসঙ্গে খাওয়া, ঘুম আর ঘরময় খেলা দেখে মনে হয় যেন দুই ভাই।
২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইনস্টাগ্রামে ছোট্ট রেক্সির প্রথম ছবিটি পোস্ট করেন ডাশা। আর সব সাধারণ ও সুস্থ বিড়ালের মতোই জীবন ছিল রেক্সির। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু কয়েক মাস পরই এক অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক মোড় নেয় রেক্সির জীবন।
প্রিয় পোষ্যদের কিছুদিনের জন্য নিজ পরিবারের কাছে রেখে শহরের বাইরে গিয়েছিলেন ডাশা। বাড়ির শিশুদের সঙ্গে খেলার এক পর্যায়ে মেরুদণ্ডে তীব্র আঘাত পায় রেক্সি। অকেজো হয়ে পড়ে রেক্সির পেছনের দুটি পা–সহ শরীরের পেছনের পুরো অংশ।
রেক্সিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন ডাশা। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে তাকে সামনের দুই পা দিয়ে হাঁটতে শেখানো শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে রেক্সি। তবে পেছনের পুরো অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ায় রেক্সি নিজে নিজে মলত্যাগ করতে পারে না। সেটির জন্য তাকে সাহায্য করতে হয়।
সোজা হয়ে হাঁটার জন্য রেক্সিকে দুই চাকার একটি স্ট্রলার বানিয়ে দিয়েছেন ডাশা। গোলাপি রঙের এই স্ট্রলারের সাহায্যে আজকাল দৌড়ে বেড়ায় রেক্সি।
রেক্সির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলের বায়োতে লেখা শেষ দুটি লাইন হচ্ছে ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত, তবে সুখী এবং সবার প্রিয়’ এবং ‘প্রেমের ব্যাপারী ও হৃদয় হরণকারী।’ দুটি লাইনই রেক্সির সঙ্গে মানানসই।
গুলগুলে গালের বিড়ালটি একের পর এক মুখভঙ্গিমা করে। কখনো দাঁত বের করে হাসে, কখনো চোখ ছোট করে রাগে, কখনো জিব বের করে ভেঙায়, আবার কখনো উঁকি দিয়ে দেখে।
ছবি তুলতে ভীষণ ভালোবাসে রেক্সি। সব সময় পোজ দেওয়ার জন্য তৈরি।
কখনো জামা পরিয়ে, কখনো বেলুনের সঙ্গে উড়িয়ে একাই রেক্সির মজার মজার ছবি তোলেন ডাশা। ছবির সঙ্গে কখনো মজাদার, কখনো প্রেরণাদায়ক, আবার কখনো প্রাণীদের নিয়ে সচেতনতামূলক বার্তা লেখেন।
এ ছবির ক্যাপশনে লেখা, ‘জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতেও হাসো।’
এ ছবি দুটির বার্তা হচ্ছে, ‘স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা: প্রত্যাশা বনাম বাস্তবতা।’
নেটিজনদের অনেকেরই প্রিয় বিড়াল রেক্সি। প্রতিটি ছবির নিচেই সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করেন তাঁরা। রেক্সির ব্যক্তিত্বকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রকাশ করেন ভালোবাসা।
Also read:পোষা বিড়াল টুকিকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হলো
আরও পড়ুন