আর্ট অব প্লেটিং: শৈল্পিকতায় সাজুক খাবারের প্লেট

খাবারের স্বাদ অটুট রাখাটা যেমন জরুরি, পরিবেশনটাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। আর এই খাবার পরিবেশনে প্লেট সাজানোও একধরনের শৈল্পিক দক্ষতা। একে বলে ‘আর্ট অব প্লেটিং’ বা প্লেট সাজানোর শৈলী। এই শৈলী রাঁধুনির রান্নাতে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা। একই সঙ্গে খাবারের প্রতি আকর্ষণ ও ভোজনের আনন্দকে বাড়িয়ে তোলে অনেক গুণ। একজন দক্ষ রন্ধনশিল্পী শুধু ভালো রান্নাই করেন না, কীভাবে খাবার উপস্থাপন করলে তা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য হবে, সে বিষয়েও সচেতন থাকেন। সঠিক প্লেটিং একটি সাধারণ খাবারকেও করে তুলতে পারে আকর্ষণীয়।

খাবারের প্লেট সাজানোটাও একধরনের শৈল্পিক দক্ষতা
ছবি: আকিজ টেবিলওয়্যারের সৌজন্যে

প্লেটিংয়ের ধারণা

প্রাচীন গ্রিস ও রোমান সাম্রাজ্যে বিশাল ভোজসভাগুলোতে খাবারকে নান্দনিকভাবে সাজানো হতো। মধ্যযুগে ইউরোপের রাজকীয় ভোজে বিভিন্ন প্রাণীর আকৃতিতে খাবার পরিবেশন করা হতো। এটা শক্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো।

সতেরো–আঠারো শতকে বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিশেষ করে ফ্রান্সে, প্লেটিং শিল্পের মর্যাদা লাভ করে। ফরাসি শেফরা বিভিন্ন উপকরণ ও রঙের ভারসাম্য রেখে খাবার সাজানো শুরু করেন। ‘আধুনিক ফরাসি রান্নার জনক’খ্যাত অগুস্ট জর্জ এসকফিয়ে ঊনবিংশ শতকে জনপ্রিয় খাবার পরিবেশন পদ্ধতি ‘এ লা রাসি’র সঙ্গে খাবারপ্রেমীদের পরিচিত করান। যেখানে প্রচলিত বিশাল ট্রেতে খাবার পরিবেশনের পরিবর্তে প্লেটে আলাদাভাবে সাজানো হয়।

বিংশ শতকে শেফরা খাবার পরিবেশনে আরও সৃজনশীল হয়ে ওঠেন। জাপানি রান্নার ধরন কাইসেকি আধুনিক পশ্চিমা খাবার পরিবেশনেও প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে ‘মলিকুলার গ্যাস্ট্রোনমি’ এবং ‘ফাইন ডাইনিং’ সংস্কৃতির বিকাশের ফলে প্লেটিংয়ে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

প্লেটিং কেন প্রয়োজন

সুস্বাদু খাবার রান্নার পাশাপাশি খাবারের প্লেট সাজানোটাও কেন জরুরি, এ সম্পর্কে বলেছেন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত বাংলাদেশি শেফ এবং ওয়ার্ল্ড মাস্টারশেফ সোসাইটির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল সি গোমেজ।

দৃষ্টি আকর্ষণ: ভালো প্লেটিং চোখে আরাম দেয়, বাড়িয়ে তোলে ক্ষুধা। দৃষ্টিনন্দন খাবার খেতে মানুষ আগ্রহ বোধ করে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট ও হোটেল ব্যবসায় যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

খাবারের মান বৃদ্ধি: সুন্দরভাবে পরিবেশিত খাবারকে মানুষ মানসম্মত ও সুস্বাদু মনে করেন। এটি খাবারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে।

ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং: ফুড ফটোগ্রাফি ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে খাবারের প্রচারে বড় ভূমিকা রাখে আকর্ষণীয় প্লেটিং। ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে চোখধাঁধানো খাবারের ছবি দেখে সেটির প্রতি আগ্রহী হয় মানুষ।

অভিজ্ঞতা উন্নত করে: খাবারের ঘ্রাণ, স্বাদ ও গঠনের পাশাপাশি চোখের মাধ্যমে এক ভিন্নমাত্রার অভিজ্ঞতা দেয় প্লেটিং।

ভালো প্লেটিং চোখে আরাম দেয়, বাড়িয়ে তোলে ক্ষুধা

চলছে ‘আর্ট অব প্লেটিং: সিজন–২’

২০২২ সালে প্রথমবারের মতো রিয়েলিটি শো ‘আর্ট অব প্লেটিং’–এর আয়োজন করে আকিজ–বশির গ্রুপের ব্র্যান্ড ‘আকিজ টেবিলওয়্যার’। তারই ধারাবাহিকতায় এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘আর্ট অব প্লেটিং: সিজন–২’।

এ আয়োজনে দেশের আনাচকানাচ ছড়িয়ে থাকা রন্ধনপ্রেমীদের প্লেট সাজানোর শৈলী তুলে ধরা হবে। আগ্রহীদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে নিজের শৈল্পিকভাবে সাজানো প্লেটের ছবি জমা দিতে হবে। বিচারক ও দর্শকের ভোটে নির্বাচিত বিজয়ীদের নিয়ে হবে মূল লড়াই। বিচার করবেন মাস্টারশেফ আইসিআই (ইন্টারন্যাশনাল কালিনারি ইনস্টিটিউট) ড্যানিয়েল সি গোমেজ এবং কালিনারি আর্টিস্ট ও প্রফেশনাল শেফ ট্রেনার সাউদিয়া সুলতানা স্মিতা।

প্রতিযোগিতা নিয়ে সাত পর্বের অনুষ্ঠান চ্যানেল আই, এনটিভি, দীপ্ত টিভি এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে প্রচার হবে। আয়োজনটির কৌশলগত সহযোগী প্রথম আলো ডটকম এবং ইন্টারন্যাশনাল কালিনারি ইনস্টিটিউট।

আকিজ বশির গ্রুপের হেড অব মার্কেটিং মো. শাহরিয়ার জামান বলেন, ‘প্রথমবার ছোট পরিসরে আমরা আর্ট অব প্লেটিংয়ের কার্যক্রম শুরু করি। সেখানে সীমিত সময়ে প্রায় এক হাজারের মতো সাজানো প্লেটের ছবি জমা পড়ে। সেই থেকেই বড় পরিসরে এবারের আয়োজন। এর মাধ্যমে আবহমান বাংলার প্লেট সাজিয়ে খাবার পরিবেশনের সংস্কৃতিটাকে মনে করিয়ে দিতে চাই। পাশাপাশি এ বার্তাটাও দিতে চাই, শুধু রেস্টুরেন্টে নয়, বাসায় আপনজন বা অতিথির জন্য সুস্বাদু খাবার রান্নার পাশাপাশি পরিবেশনটাও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, এ আয়োজন সারা দেশের রন্ধনশিল্পীদের প্লেটিং–চর্চায় অনুপ্রাণিত করবে।’

প্লেট সাজানোর বৈচিত্র্যময় দক্ষতা তুলে ধরতে ‘আকিজ টেবিলওয়্যার’–এর উদ্যোগে শুরু হচ্ছে রিয়েলিটি শো ‘আর্ট অব প্লেটিং: সিজন–২’

পুরস্কার

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে বাছাই ২০০ জনকে নিয়ে গ্র্যান্ড অডিশনের মাধ্যমে ঢাকায় শুরু হবে রিয়েলিটি শো। সেখান থেকে প্লেট সাজানোর প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মূল পর্বের জন্য লড়াই শুরু করবেন ৩০ জন। চূড়ান্ত পাঁচ বিজয়ীর জন্য থাকবে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার। প্রথম সেরা ১০ লাখ, দ্বিতীয় সেরা ৫ লাখ, তৃতীয় সেরা ৩ লাখ এবং চতুর্থ ও পঞ্চম সেরা পাবেন এক লাখ টাকা করে পুরস্কার। এ ছাড়া সেরা পাঁচজন পাবেন ইন্টারন্যাশনাল কালিনারি ইনস্টিটিউটে প্লেটিং বিষয়ে বিশেষ কোর্স করার সুযোগ। বাকি ২৫ জনের প্রত্যেকের জন্য থাকবে আকর্ষণীয় পুরস্কার, সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও আকিজ টেবিলওয়্যারের ডিনার সেট।

অংশগ্রহণের নিয়মাবলি

১. ১৮ বছরের বেশি বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক যথাযথ নিয়ম মেনে এ আয়োজনে অংশ নিতে পারবেন।

২. www.aop.com.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রতিযোগীর নাম, মোবাইল নম্বর, জেলা ও ই–মেইল অ্যাড্রেস দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

৩. তারপর অ্যাকাউন্টে লগইন করে আগ্রহীদের সাজানো খাবারের প্লেটের স্পষ্ট ছবি জমা দিতে হবে।

৪. একটি প্লেটের বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলের সর্বোচ্চ পাঁচটি ছবি জমা দেওয়া যাবে।

৫. প্রতিযোগীরা চাইলে নিজেকেসহ সাজানো প্লেটের ছবি জমা দিতে পারবেন।

৬. জমাকৃত প্লেটের একটা নাম দিতে হবে এবং সেটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখে দিতে হবে।

৭. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বানানো, সংগৃহীত বা কম্পোজকৃত কোনো প্লেটের ছবি গ্রহণযোগ্য নয়।

৮. প্লেটের ছবি জমা দেওয়ার শেষ সময়: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার রাত ১২টা।

৯. জমাকৃত প্লেটের ছবি আকিজ টেবিলওয়্যার কর্তৃপক্ষ যেকোনো প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে।

১০. প্রতিযোগিতা–সংক্রান্ত সব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

আর্ট অব প্লেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে, প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ও ভোট দিতে ভিজিট করুন: www.aop.com.bd