চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে প্রি আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ে পড়ছেন সানজিদা আলম
চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে প্রি আন্ডারগ্র্যাড পর্যায়ে পড়ছেন সানজিদা আলম

ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই পরিবারের দায়িত্ব আমার ওপর

দরিদ্র পরিবারের প্রথম মেয়েসন্তান, যাঁরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পৌঁছান, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে দেওয়া হয় আইডিএলসি ও প্রথম আলো ট্রাস্টের ‘অদ্বিতীয়া’ বৃত্তি। চট্টগ্রামে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে (এইউডব্লিউ) পড়ার সুযোগ পান তাঁরা। আবাসন, টিউশন ফি মওকুফসহ নানা সুবিধা তাঁদের দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১২ সাল থেকে ট্রান্সকম গ্রুপের সহযোগিতায় ৪২ জন ও ২০১৭ সাল থেকে আইডিএলসি ফাইন্যান্স পিএলসির সহযোগিতায় ৮৬ জনসহ মোট ১২৮ জন এ পর্যন্ত এই বৃত্তি পেয়েছেন। ৭৬ জনের এরই মধ্যে স্নাতক শেষ হয়েছে, যাঁদের অনেকেই দেশে-বিদেশে ভালো অবস্থানে আছেন। ২০২৫ সালেও বৃত্তি পেয়েছেন ১০ জন। পড়ুন তাঁদের একজন—কুমিল্লার সানজিদা আলম–এর লেখা।

ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, মাকে বাবা খুব মারধর করত। আমাকেও। ২০১২ সালে বাধ্য হয়ে আমাদের বাড়ি ছাড়তে হয়। আমাদের দুই ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে মা যখন কুমিল্লা রওনা হয়, তখন বাবার দেওয়া যন্ত্রণা আর মারের দাগ ছাড়া মায়ের কাছে কিছুই ছিল না। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া আমি সেদিনই বুঝে গিয়েছিলাম, ছোট ভাইটার দায়িত্ব এখন আমার ওপর।

শুরু হয় দুই সন্তানকে নিয়ে মায়ের একাকী লড়াই। সমাজের মানুষ একজন ‘ডিভোর্সি’ নারীকে ভালো চোখে দেখে না। সেলাইয়ের কাজ করে সংসার আর আমাদের পড়ার খরচ জোগাতে মায়ের কী যে কষ্ট হতো! মাসে একবার আমরা মাছ বা মুরগি খেতে পারতাম। এত বাধার পরও পড়ালেখায় আমার মন ছিল। সব সময় প্রথম হতাম।

২০১৫ সালের পর থেকে মা সেলাইয়ের কাজ আর করতে পারছিল না। কারণ, তার খুব মাথাব্যথা হতো। সংসারের অবস্থা তখন আরও খারাপ হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেল। বাধ্য হয়ে টিউশনি শুরু করি। কিন্তু আমি নিজেই তখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। এত কম বয়সী ‘টিচার’-এর ওপর কেউ ভরসা করতে চাইত না। পড়ালেও বেতন দিতে চাইত না। কিন্তু তখন থেকেই আদতে পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে। এসএসসি পরীক্ষা যখন চলছে, তখনো আমাকে টিউশনি করতে হয়েছে। পরীক্ষা শেষ করেই চলে যেতাম টিউশনিতে। এত কিছুর মধ্যেই জিপিএ–৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করি।

সানজিদা আলম

এ বছরের জানুয়ারিতে এইউডব্লিউতে আসি। আমার অবর্তমানে সংসার আর চলছেই না। আত্মীয়স্বজনের সাহায্যে মাকে চলতে হচ্ছে। প্রতি রাতে মায়ের জন্য কাঁদি। আশা করি, অদ্বিতীয়া বৃত্তি কিছুটা হলেও আমাদের দুঃখ দূর করবে।