রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে রাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি। প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন, ইশতেহার জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে যাঁরা ভোট দেবেন, তাঁদের মধ্যেও বেশ রোমাঞ্চ টের পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচিত প্রার্থীদের কাছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া কী হবে? কেমন নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন তাঁরা?

উম্মে সুমাইয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় পর রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের আমেজ। পোস্টার-ব্যানারে রঙিন হয়ে উঠছে চারদিক। একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আশা করি নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও সংঘাতমুক্ত। যেখানে ভোটাররা নির্ভয়ে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারবেন। আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক চর্চার সুন্দর দৃষ্টান্ত চাই, যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেবে।
প্রতিনিধিদের কাছে চাওয়া, তাঁরা যেন শিক্ষার্থীদের কথা শোনেন, বাস্তব সমস্যার সমাধানে কাজ করেন এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে স্বচ্ছ নেতৃত্ব প্রদান করেন। আমরা অঙ্গীকারহীন রাজনীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন চাই না। এই নির্বাচনের মাধ্যমে যেন একটি জবাবদিহিমূলক ও শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। নির্বাচিতদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত সেশনজট নিরসন ও শিক্ষা-গবেষণার মানোন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া। কারণ, আমাদের মূল পরিচয় শিক্ষার্থী।
নিমীলিকা আলম, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনিক জটিলতা ও গঠনতন্ত্রের অজুহাত তুলে তিন দশকের বেশি সময় ধরে রাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। এত বছর পর নির্বাচন হওয়ায় ক্যাম্পাসে এখন এক নতুন প্রাণচঞ্চল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সবাই আলোচনা করছে, স্বপ্ন দেখছে।
আমরা চাই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক রাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচন হোক মুক্তচিন্তার প্রতিফলন। যেখানে নারী-পুরুষ, সব শিক্ষার্থীর সমান কণ্ঠ থাকবে, সমান অংশগ্রহণ থাকবে। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার একমাত্র মঞ্চটি আবার উজ্জীবিত হোক নতুন উদ্যমে। রাকসু হয়ে উঠুক অরাজনৈতিক ছাত্র সংসদ। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের প্রথম দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থী–সমাজকে একত্রে ধরে রাখা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দেওয়া।
রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে, ক্যাম্পাসের সমস্যাগুলো নিয়ে সরাসরি প্রতিনিধিদের বলতে পারবে। এত দিন ধরে এই সুযোগ বন্ধ ছিল, এখন আবার ফিরে আসতে চলেছে। নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো প্রকার ভীতি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী যেন নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। একটা স্বচ্ছ, সাবলীল ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন এখন প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি।
তৌকির আহমেদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যক্তিগতভাবে রাকসু নিয়ে আমি বেশ কৌতূহলী। দেখার জন্য মুখিয়ে আছি—শেষ পর্যন্ত কারা প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তাঁদের মাধ্যমে কি আমরা যারা সাধারণ শিক্ষার্থী, তাদের সমস্যা, আশা, আকাঙ্ক্ষাগুলোর কথা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাবে?
যাঁরা প্রার্থী, তাঁরা হলের রুমে রুমে আসছেন। আমাদের সমর্থন প্রত্যাশা করছেন। ক্যাম্পাসে আগে কখনো এমন পরিবেশ দেখিনি। তাই এটা খুব ভালো লাগছে। আশা করছি, একটা প্রতিযোগিতামূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আমি চাই এই নির্বাচনে যেন কোনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ না থাকে। কেউ যেন একক আধিপত্য বিস্তার না করে। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে।
যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের কাছে আমার প্রত্যাশা—তাঁরা আমাদের সঙ্গে বসবেন, আমাদের কথা শুনবেন এবং আমাদের সমস্যাগুলো যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দেবেন। আমি চাই, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আমাদের আবাসনসংকট নিরসন, ডাইনিংয়ে পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা এবং ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে কাজ করুক।
মো. ফেরদাউস ইসলাম, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাকসু নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। দীর্ঘদিন পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা এলেও কার্যত এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দ্বিধা ও হতাশা বিরাজ করছে। একদিকে ভোটাধিকার বঞ্চনার অভিযোগ তুলে নবীন শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। ৭২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভোটের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে। তাদের অভিযোগ, ভোট দেওয়ার সুযোগ না পেলে নির্বাচনের স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রমও ধীরগতির হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ গড়ে উঠছে না বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। অন্যদিকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের প্রভাব ও প্রার্থিতা ঘিরে সংশয় আরও জোরালো হচ্ছে। সব মিলিয়ে বহুল প্রত্যাশিত রাকসু নির্বাচন এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলে আছে। শিক্ষার্থীদের একাংশ মনে করছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান না হলে নির্বাচন নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হতে পারে। তবে রাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করেন। পাশাপাশি যেকোনো কাজের জন্যই তাঁরা যেন সব সময় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় থাকেন, এ আশাই করি।