ডা. এ এম শামীম
ডা. এ এম শামীম

২০ জন কর্মীর ল্যাবএইডে এখন কর্মী ৭ হাজারের বেশি

৩৬ বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে ল্যাবএইড। দীর্ঘ এই যাত্রার নানান দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ল্যাবএইড গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম

প্রশ্ন

ল্যাবএইড গ্রুপের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

১৯৮৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করার পর পেশাগত জীবন শুরু করতে গিয়ে দেখলাম, দেশে মানসম্মত সেবা দেওয়াটা খুব চ্যালেঞ্জিং। একজন রোগীকে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়, তার ভিত্তিতে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় একজন চিকিৎসককে। কিন্তু চিকিৎসক আস্থা রাখতে পারেন, এমন ল্যাব খুঁজে পাওয়াটাই মুশকিল। তখন দক্ষ এবং স্বনামধন্য চিকিৎসকেরা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা দিতেন। তবে এক জায়গাতেও যে বহু চিকিৎসক রোগী দেখতে পারেন, এই ধারণাই ছিল না। ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে এমন একটি উদ্যোগ নিই, যাতে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক একই জায়গায় সেবা দিতে পারেন। ১৯৮৯ সালে শুরু করি ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ২৪ ঘণ্টা হৃদ্‌রোগের জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করি ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল। এরপর ধীরে ধীরে বিস্তৃত হয় আমাদের কর্মপরিধি।

প্রশ্ন

বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল হিসেবে কার্ডিয়াক হাসপাতাল দিয়েই কেন শুরু করলেন?

আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য ২০০০ সালে তাঁকে নিয়ে দেশের বাইরে যেতে হলো। এনজিওগ্রাম করানো হলো। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পুরো পরিবারের ঝক্কিটা উপলব্ধি করলাম তখন। এর পর থেকেই হৃদ্‌রোগীদের জন্য একই জায়গায় চিকিৎসার সব আয়োজনের পরিকল্পনা করলাম। এক ছাদের নিচে এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি ও বাইপাস চিকিৎসার ব্যবস্থা করলাম। দেশের প্রথম বিশেষায়িত কার্ডিয়াক হাসপাতাল হিসেবে মানুষের কাছে ল্যাবএইড গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। প্রতিদিন এখন গড়ে ২৫টি এনজিওগ্রাম হয় এখানে। খরচও খুব কম। মাত্র ২০ হাজার টাকা। অথচ সেই ২০০০ সালেই মায়ের এনজিওগ্রামের জন্য খরচ হয়েছিল সাড়ে ৩ লাখ টাকা।

প্রশ্ন

বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার কাজটা তো কঠিন। এ ক্ষেত্রে দেশে কী ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন?

দেশের চিকিৎসকেরা নিঃসন্দেহে দক্ষ। নিজ উদ্যোগে উন্নত প্রশিক্ষণও নেন তাঁরা। তবে এ দেশে রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা কম। তাই একজন চিকিৎসকের কাজের চাপ অনেক বেশি। দেশের নানাবিধ অস্থিরতায়ও মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। আরও চলে ‘অ্যান্টি বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং’। সব মিলিয়ে দেশের চিকিৎসকের কাছে অনেক সময় স্বস্তি না-ও পেতে পারেন একজন রোগী। রোগ সম্পর্কে একজন চিকিৎসকের কাউন্সেলিং অংশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব রোগীকে সময় দিয়ে কাউন্সেলিং করার কাজটা চ্যালেঞ্জিং। হাসপাতালের পরিবেশ, প্রযুক্তিগত দিক এবং সামগ্রিক সেবার বিষয়েও যত্নশীল থাকতে হয়। জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য যে ধরনের প্রযুক্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, সেগুলোর ব্যবস্থা করার প্রচেষ্টা চলে প্রতিনিয়ত। সেই প্রক্রিয়াটাও সব সময় খুব সহজ হয় না।

ল্যাবএইড হাসপাতাল
প্রশ্ন

হাসপাতালের সেবার সঙ্গে চিকিৎসক ছাড়া আরও অনেকে যুক্ত থাকেন। এই বিশাল মানবসম্পদের উন্নয়নে ল্যাবএইড গ্রুপ কতটা উদ্যোগী?

১৯৮৯ সালে মাত্র ২০ জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ল্যাবএইড। এখন এই প্রতিষ্ঠানে ৭ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। একটি হাসপাতালের জন্য দক্ষ নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্টের বিকল্প নেই। এমনকি যিনি ফ্রন্ট ডেস্কে বসছেন, তিনি একজন রোগী বা তাঁর স্বজনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্টেট কলেজ অব হেলথ সায়েন্সেস এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। কর্মক্ষেত্রেও সেবার মান নিশ্চিত করতে রোজ কাজ করে চলি আমরা।

প্রশ্ন

ল্যাবএইড গ্রুপের আরেকটি উদ্যোগ ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। এ সম্পর্কে জানতে চাই।

দেশে বহু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বেশির ভাগ ওষুধের জোগানও আছে। তবে আমাদের ভাবনাটা ওষুধের মান নিয়ে। তাই ২০১৩ সালে ‘কোয়ালিটি ফার্স্ট’ মূলমন্ত্র নিয়ে আমরা গড়ে তুলেছি ল্যাবএইড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। ওষুধের কাঁচামাল বাছাই, ওষুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন—প্রতিটি ধাপে মানের বিষয়ে সতর্ক থাকার মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে কার্যকর এবং নিরাপদ ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছি আমরা। মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করা যেন একটা যুদ্ধ।

চিকিৎসা খাতের যেখানেই কোনো কিছুর অভাব বোধ করেছি, সেখানেই কাজ করেছে ল্যাবএইড গ্রুপ।

প্রশ্ন

আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনাকেও ধন্যবাদ।