মারমা সম্প্রদায়ের বিয়ের আয়োজনের ঐতিহ্যবাহী থালা নাচ
মারমা সম্প্রদায়ের বিয়ের আয়োজনের ঐতিহ্যবাহী থালা নাচ

ক্যানসার আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে অন্য রকম এক বৈশাখী উৎসব

নানা আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করা হয় দেশজুড়েই। তবে গত বৃহস্পতিবার ছায়ানটের বৈশাখী উৎসবটি ছিল সব উৎসবের চেয়ে আলাদা। কী হয়েছিল সেই উৎসবে?

ছায়ানট মিলনায়তনে সেদিন বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করেছিল শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘নাগরদোলা’। বৈশাখী উৎসবের রঙে নিজেদের রাঙিয়ে হাজির হয়েছিলেন নানা বয়সী মানুষ। শিশুদের ঝলমলে উপস্থিতি নজর কেড়েছিল। গানে গানে শুরু হওয়া উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. পারভীন শাহিদা আখতার। উদ্বোধনী বক্তব্যে লড়াকু মানুষের জীবনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, ‘এই উৎসব জীবনের সৌন্দর্য, শক্তি ও সাহসকে উদ্‌যাপন করার আয়োজন। এটি শুধু উৎসব নয়; বরং আলোয় ফেরার প্রতীক।’

বক্তব্য শেষে আবৃত্তিও করেছেন ক্যানসার–যোদ্ধাদের জন্য।

আয়োজনটি কেন আলাদা

ক্যানসার আক্রান্ত মানুষ, তাঁদের পরিবার ও ক্যানসার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীদের নিয়েই শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড। ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আরও রয়েছেন জনহিতকর কাজে আগ্রহী মানুষ। সবার অংশগ্রহণে জীবনের বহুমাত্রিক গল্প ফুটে উঠেছিল মঞ্চে। পেশাদার শিল্পী ছাড়া সেদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন এই ক্যানসার আক্রান্ত মানুষেরা। যেখানে সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, ক্যানসার মানে জীবনের পরিসমাপ্তি কিংবা জরাগ্রস্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা, সেখানে নতুন এক বৈশাখে ক্যানসার রোগীদের নিয়ে এমন উৎসব এক ভিন্নতর ভাবনার প্রকাশই বটে।

সমবেত কণ্ঠে গান

সবার অংশগ্রহণে আয়োজন

নাচ, গান, আবৃত্তি সবই ছিল অনুষ্ঠানে। ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, ক্যানসারের চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসক, চিকিৎসকের সন্তান—সবার অংশগ্রহণে আয়োজনটি ছিল দারুণ বৈচিত্র্যময়। মারমা সম্প্রদায়ের বিয়ের আয়োজনের ঐতিহ্যবাহী থালা নাচ করেছেন ক্যানসারযোদ্ধা এক নারী। চমৎকৃত হয়েছেন দর্শক। খুদে অংশগ্রহণকারীদের কেউ সারেঙ্গি বাজিয়ে গান করেছে, কেউ আধো বোলে করেছে আবৃত্তি। দর্শকদের মধ্যে ক্যানসারবিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে সেখানে ছিল ব্যতিক্রমী আরেকটি আয়োজন। দর্শকের জন্য আয়োজিত র‍্যাফল ড্রয়ের পুরস্কারগুলোর মোড়কে সচেতনতামূলক বাক্য লেখা ছিল। পুরস্কার গ্রহণের পর বিজয়ী দর্শকের দায়িত্ব ছিল বাক্যটি পড়া। তিনি পড়ার পর সেই বিষয় সহজভাবে বুঝিয়েও দেওয়া হয় সবাইকে।

নাচ, গান, আবৃত্তি সবই ছিল অনুষ্ঠানে

দীর্ঘ যাত্রার মানবিক গল্প

শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. রাহনুমা পারভীন এক তথ্যচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করলেন প্রতিষ্ঠানটির পথচলার মানবিক গল্প। ২০০৮ সালে ক্যানসার রোগীদের নিয়ে কাজ শুরু করে শান্তি ক্যানসার ফাউন্ডেশন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিশেষভাবে ভাবেন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরা। এত বছরে হাজার হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা পেয়েছেন সেখান থেকে। আরও পেয়েছেন মানবিক সমর্থন ও মারাত্মক শারীরিক সমস্যায় থাকা একজন রোগীর জন্য যা সবচেয়ে বেশি জরুরি। বিনা মূল্যে সেবা ও ওষুধও দেওয়া হয়েছে বহু রোগীকে। সরকারি অনুদান নেই, কেবল শুভানুধ্যায়ীদের আর্থিক সহায়তায় এত বছর ধরে কাজ করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। সবাইকে নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে চলার এই প্রয়াসেই সেই অপরাহ্ণে ‘নাগরদোলা’ ছিল এক ভিন্নমাত্রিক সংযোজন।