
ফুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রঙিন বিটরুট চাষ করতে পারেন আপনার ছাদ কিংবা বারান্দা–বাগানে। লালচে–সবুজ পাতার গোড়ায় লালচে–বেগুনি রঙের বিটরুট চমৎকার হয়ে ধরা দেবে আপনার বাগানে। এর জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না এবং অল্প যত্নেই বেডে বা টবে চাষ করা যায়। বাড়েও খুব দ্রুত। একসময় পাবেন চোখধাঁধানো রঙিন বিটরুট, সঙ্গে পুষ্টিকর সবুজ শাক। আপনার ফলানো বিটরুট নতুন স্বাদ ও পুষ্টি যোগ করবে প্রতিদিনের খাবারে। সালাদ হিসেবে, সবজি হিসেবে, এমনকি জুস বানিয়েও খেতে পারেন পুষ্টিকর বিটরুট। বিশেষত হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য বিটরুট দারুণ উপকারী। শীতের এ সময়টাই বিটরুট ফলানোর মোক্ষম সময়। তাই জেনে রাখুন বিস্তারিত।
১০-১২ ইঞ্চি গভীরতার টব বেছে নিন, এতে বিটরুটের শিকড় দ্রুত ছড়াবে আর যথেষ্ট বড় হওয়ার সুযোগও পাবে। একেকটি বিটরুট ২০০–৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। টবে অতিরিক্ত পানি জমে শিকড়ে পচন ধরতে পারে, তাই টবের নিচে পানিনিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। মাটির টব বা জিও ব্যাগ বিটরুট চাষের জন্য ভালো।
বিটরুটগাছ জৈব পদার্থসমৃদ্ধ উর্বর বেলে দোঁআশ মাটিতে ভালো হয়। বেলে দোঁআশ মাটি, গোবর সার বা ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো কম্পোস্ট সার এবং কোকোপিট মিশিয়ে টবের মাটি প্রস্তুত করুন। পরে প্রতি সপ্তাহে অল্প করে কম্পোস্ট সার যোগ করলেই বিটরুট তার বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পেয়ে যাবে।
বিটরুটের বীজ প্রায় ১ ইঞ্চি গভীরে এবং ৩-৪ ইঞ্চি দূরে দূরে বপন করুন। ১০-১২ ইঞ্চি ব্যাসের টবে সর্বোচ্চ চারটি গাছ রাখতে পারেন। শুরুতে পাশাপাশি দুটি করে একই টবে মোট ৮টি গর্ত করুন। গর্তের গভীরতা হতে হবে ২-৩ সেন্টিমিটার।
বীজ অঙ্কুরোদ্গম হতে যা সাধারণত ৫–১০ দিন সময় নেয়। এ সময় মাটির আর্দ্রতা ঠিক রাখতে মাঝেমধ্যে পানি স্প্রে করে টবের মাটি ভিজিয়ে দিন।
চারা গজানোর ২০-২৫ দিন পর, পাশাপাশি থাকা দুটি চারার মধ্যে সবচেয়ে সুস্থ–সবল চারাটি রেখে অন্যটি তুলে ফেলুন। এভাবে জন্মানো ৮টি গাছ থেকে একটি টবের জন্য ৪টি চারা রাখুন। সুস্থ–সবল এই চারা থেকে ভালো ফলন আশা করা যায়।
বীজ থেকে চারা করা কষ্টসাধ্য মনে হলে নিকটবর্তী নার্সারি থেকে চারা এনেও সরাসরি রোপণ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চারা রোপণের পর প্রথম ১০ দিন ছায়াযুক্ত স্থানে রাখুন। চারার বৃদ্ধি খেয়াল করে রোদে দিন।
বিটরুটের বাল্ব বা কন্দ গঠনের জন্য প্রতিদিন চার-ছয় ঘণ্টা রোদের প্রয়োজন। সকালের মিষ্টি রোদ আমাদের মতো গাছের জন্যও ভালো। যদি খেয়াল করেন দুপুর রোদের তীব্রতায় গাছের পাতা নেতিয়ে পড়ছে বা শুকিয়ে যাচ্ছে, তখন ওপরে কাপড় বা তেমন কিছু দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে পারেন।
সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্দ্রতা ধরে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত পানি দিলে বিটরুটের কন্দে ফাটল ধরতে পারে, ছত্রাকের সংক্রমণে পচন ধরতে পারে। তাহলে উপায়? উপায় হলো মাটির ওপরের অংশ শুকিয়ে এলে তবেই পানি দেওয়া।
বাগানের শুকনা পাতা দিয়ে মাটির ওপরের অংশ ঢেকে দিতে পারেন। এভাবে মালচিং করলে মাটি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
জাতের ওপর নির্ভর করে বিটরুট তোলার সময়। জাতভেদে বীজ বপন থেকে শুরু করে বিটরুট তোলা পর্যন্ত ৭০-১০০ দিন সময় লাগতে পারে। এ ছাড়া বিটরুটের বৃদ্ধি আপনি নিজেই দেখতে পাবেন। কতটা বড় হওয়া পর্যন্ত টবের মাটিতে রাখবেন, সে–ও আপনার ওপর নির্ভর করে।
সাধারণত কন্দের আকার টেনিস বল বা গলফ বলের সমান হলে নিখুঁত আকার ধরে নেওয়া যায়। বিটরুট খুব বড় হলে তা শক্ত আর আঁশযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সবে তোলা বিটরুটগুলো বাজার থেকে কেনা বিটরুটের তুলনায় তরতাজা হয়, স্বাদ হয় মিষ্টি ও রসালো।