ঈদের ছুটিটা এবার বরাবরের চেয়ে লম্বা ছিল। কেউ স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ আর হইচই করে কাটিয়েছেন, কেউবা ছিলেন একান্তে, নিরবচ্ছিন্ন বিশ্রামে। ছুটি শেষে নিয়মিত কাজে ফিরতে তাই একধরনের অনিচ্ছা চেপে বসাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কাজে তো ফিরতেই হবে। কাজ আছে বলেই না ছুটি! আসুন জেনে নেওয়া যাক, ছুটির পর মন কেমন করা অনুভূতি সামলে কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে ফেরা যায়। জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাউফুন নাহার
সিগমুন্ড ফ্রয়েড, এরিক বার্নসহ বেশ কিছু মনোবিজ্ঞানীর মতে, আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বে একাধিক সত্তা বা ইগো স্টেট থাকে। যেমন আমাদের ভেতরে একাধারে রয়েছে অভিভাবক, পরিণত ও শিশুসত্তা। যখন আমরা দৈনন্দিন রুটিনে বা পেশাগত কাজে থাকি, তখন আমাদের ভেতরে পরিণত বা কর্মিসত্তাটি বেশি সক্রিয় থাকে। আমরা যুক্তি দিয়ে বিচার–বিশ্লেষণ করে চলি, কর্মঠ থাকি। কিন্তু যেই না ছুটি শুরু হয়, নিজের অজান্তেই আমাদের ভেতরের শিশুসত্তাটি ‘ইয়াহু’ বলে দৈনন্দিন রুটিনকেও ছুটি দিয়ে দেয়। যে ছুটির প্রতীক্ষায় সে দিন গুনছিল। ছুটি শেষ হলে আমাদের অন্তরের সেই শিশুটি নালিশ জানাতে থাকে। সে আরও ছুটি চায়, আরও স্বাধীনতা, আরও আনন্দ চায়। ঠিক যেমনটা শৈশবে হতো। কোনো খেলা থেকে আমাদের টেনে তোলা অভিভাবকদের জন্য ছিল বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। কিন্তু বড় হওয়ার পর আমাদের টেনে তোলার জন্য অন্য কেউ থাকে না। অগত্যা নিজেই নিজের অভিভাবক বনে গিয়ে নিজেকে ধাক্কাধাক্কি করে কাজে পাঠাতে হয়।
প্রকাশ করুন: আপনি কেমন অনুভব করছেন, তা নিজের ভেতরে আবদ্ধ না রেখে কাছের মানুষজনের কাছে মন খুলে বলুন। লিখতে পছন্দ করলে লিখেও নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন। নিজেকে প্রকাশ করলে আপনার শিশুসত্তা স্বস্তি পাবে।
কৃতজ্ঞ থাকুন: ছুটির ফ্রেমবন্দী স্মৃতিগুলো দেখুন এবং নিরাপদে সুন্দর একটা সময় পার করে এসেছেন বলে তৃপ্ত ও কৃতজ্ঞ থাকুন। স্বজনদের কথা মনে পড়লে যোগাযোগ করে খোঁজখবর নিন। উৎসবের ছুটি শেষ মানেই কর্মজীবন থেকে ছুটি শেষ, তা কিন্তু নয়। সাপ্তাহিক ছুটি আনন্দে কাটানোর জন্য পরিকল্পনা করুন। কাজে উদ্দীপনা আনতে নিজেকে মনে করিয়ে দিন, আপনার কাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ।
দেহঘড়ি মেরামত করুন: ছুটিতে ঘুম ও খাওয়াদাওয়ার রুটিন বদলে যায়। রাতে কম ঘুমিয়ে সকালে কাজে গেলে সহজেই ক্লান্তি আসে ও মেজাজ বিগড়ে যায়। ছুটি শেষে তাই নিয়ম ও সময় মেনে সুষম খাবার খাওয়া, রাতে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সামান্য হলেও শরীরচর্চা করে দেহঘড়ি সচল রাখা প্রয়োজন।
আমাদের অনুভূতি ও আচরণ অনেকাংশেই আমাদের চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে। কাজে ফেরা মানেই কঠিন ও ক্লান্তির জীবন, এমন চিন্তাধারা আমাদের মনোবল ভেঙে দিতে পারে। বরং কর্মদীপ্ত থাকা, কাজ ও বিশ্রামের ভারসাম্যের মধ্যেই প্রকৃত প্রশান্তি, এমন দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পথচলাকে সহজ করে তোলে।