
অফিস থেকে হাসিমুখে বের হয়ে দেখলেন, আপনার ঝকঝকে গাড়ির ওপর সাদা-কালো শিল্পকর্ম এঁকে রেখেছে কোনো এক পাখি! যেন আপনার গাড়িটিকেই মলত্যাগের জন্য সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেছে। আসলে এই দলে আপনি একা নন! অনেকেই এই বিপত্তির মুখে পড়েন। এর পেছনে একটা বিজ্ঞানও আছে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যালানস ফ্যাক্টরি আউটলেট’ নামের এক কোম্পানি এ বিষয়ে গবেষণাও করেছে। এই কোম্পানি গাড়ির গ্যারাজ বা কারপোর্ট তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পাখিরা নির্দিষ্ট কিছু গাড়িকেই মলত্যাগের জন্য বেশি পছন্দ করে! এর পেছনে কিছু মজার কারণও আছে। সেসব জানা যাক।
কোন রঙের গাড়িতে পাখিরা সবচেয়ে বেশি মলত্যাগ করে, তা জানতে অ্যালানস ফ্যাক্টরি আউটলেট যুক্তরাষ্ট্রের এক হাজার গাড়িচালকের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা জানতে চেয়েছিল, চালকেরা কী ধরনের গাড়ি চালান, কোথায় পার্ক করেন, পাখির ময়লায় কী ক্ষতি হয়েছে এবং এই সমস্যা ঠেকাতে তাঁরা কী করেছেন। এরপর এসব তথ্যের সঙ্গে পাখির আচরণ আর জীববিজ্ঞান–সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলিয়ে দেখেছেন।
জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের গড় বয়স ছিল ৪০ বছর। বিভিন্ন প্রজন্ম অংশ নিয়েছিল এই জরিপে। এর মধ্যে জেন–জি ছিল ১৬ শতাংশ, মিলেনিয়ালস ৫৩ শতাংশ, জেন–এক্স ২৬ শতাংশ আর বেবি বুমার ৬ শতাংশ। জেন–জি, মানে যাদের জন্ম ১৯৯৭–২০১২ সালের মধ্যে। মিলেনিয়ালস বা জেন–ওয়াইয়ের জন্ম ১৯৮১-১৯৯৬ সালের মধ্যে। ১৯৬৫-১৯৮০ সালের মধ্যে জন্ম জেন–এক্সের। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যাঁদের জন্ম, অর্থাৎ ১৯৪৬-১৯৬৪ সালের মধ্যে, তাঁদের বলে বেবি বুমার।
পাখির মলত্যাগের জন্য রং খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। পাখিদের সবচেয়ে পছন্দের রং বাদামি। তবে এই তালিকায় আরও রং আছে। তালিকার নিচের দিকের গাড়িগুলোতে পাখিরা সবচেয়ে কম মলত্যাগ করে।
বাদামি
লাল
কালো
হলুদ বা কমলা
নীল
সাদা
রুপালি বা ধূসর
এখন প্রশ্ন হলো, পাখি কেন বাদামি রঙের গাড়িতে বেশি মলত্যাগ করে? কারণ, পাখির আছে বিশেষ দৃষ্টিশক্তি। পাখিদের রং চেনার ক্ষমতা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
পাখি আলট্রাভায়োলেট বা অতিবেগুনি আলো দেখতে পায়, যা মানুষ দেখতে পায় না। পাখিদের কাছে কিছু গাড়ির রং অনেক বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। সে জন্যই গাঢ় রংগুলো পাখিদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় লাগে।
আরেকটা কারণ হলো, গাড়ির চকচকে ভাব। গাড়ির লুকিং গ্লাসের আয়নায় ঝকঝকে প্রতিবিম্ব দেখে পাখিরাও বিভ্রান্ত হয়। বিশেষ করে প্রজনন মৌসুমে একটা পাখি হয়তো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ভাবে—আরে, আমার এলাকায় আরেকটা প্রতিযোগী ঢুকে পড়েছে! ব্যস, শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। প্রতিপক্ষের দিকে বিষ্ঠা ছুড়ে মারে। আসলে লড়াই করে নিজের সঙ্গেই!
রঙের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু ব্র্যান্ডের গাড়িও পাখিদের টার্গেট লিস্টে ওপরে থাকে। তালিকায় থাকা গাড়িগুলোর বেশির ভাগই ভারী কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব গাড়ি হয়তো গ্যারেজের ভেতর বেশি সময় থাকে না। মালামাল টানা হয় বলে তেমন ঢেকে রাখাও সম্ভব নয়। আর এ সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করে পাখিরা!
তালিকার শীর্ষ ১০টি ব্র্যান্ড
র্যাম ট্রাকস
জিপ
শেভরোলেট
নিশান
ডজ
কিয়া
টেসলা
অডি
ফোর্ড
সুবারু
গাড়ির পাশাপাশি গবেষণায় মানুষকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তাঁদের জীবনে কী প্রভাব ফেলেছে। ৫৮ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁদের গাড়িতে একই দিনে একাধিকবার পাখির মলত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে!
২৯ শতাংশ মানুষ তো বিশ্বাস করেন, পাখিরা তাঁদের গাড়িকেই টার্গেট করে রেখেছে। এতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষের বছরে প্রায় ৬০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে শুধু গাড়ি ধোয়া আর পাখির মলের দাগ পরিষ্কার করতে।
এই ঘটনা মানুষের সামাজিক জীবনেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, গাড়ি বেশি নোংরা হওয়ায় তাঁরা কখনো কখনো নিজেদের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন বা পিছিয়ে দিয়েছেন। আর ১৪ শতাংশ মানুষের তো গাড়িতে ওঠার বা নামার সময় সরাসরি নিজের গায়েই মল এসে পড়েছে!
পাখিদের আক্রমণের হাত বাঁচার সেরা উপায় হলো, গাড়ি গ্যারেজে রাখা বা কভার দিয়ে ঢেকে রাখা। কিন্তু বাইরে গেলে তো আর সব সময় কভার দিয়ে ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। তখন চেষ্টা করুন, বিদ্যুতের তার বা গাছের নিচে পার্ক না করতে। এর জন্য যদি আপনাকে কিছুটা হাঁটতে হয়, তাহলে হাঁটাও ভালো!
আপনার গাড়িতে যদি আসলেই পাখি মলত্যাগ করে, তাহলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন। কারণ, পাখির মলে থাকে ইউরিক অ্যাসিড, যা খুব ক্ষয়কারী। এটা আপনার গাড়ির দামি রঙের আস্তরণ নষ্ট করে দিতে পারে। এমনকি সময়মতো পরিষ্কার না করলে স্থায়ী দাগও বসে যেতে পারে।
যত দ্রুত সম্ভব মল পরিষ্কার করুন।
গাড়ির জন্য তৈরি হালকা সাবান ব্যবহার করুন। বেশি বিপদে পড়লে বাসন মাজার সাবানও চলবে।
একটি মাইক্রোফাইবার কাপড়ে সাবান ও পানি লাগিয়ে আলতো করে ঘষুন। জোরে ঘষলে আঁচড় পড়তে পারে।
সবশেষে ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সূত্র: ১. অ্যালানস ফ্যাক্টরি আউটলেট: দ্য বার্ড ড্রপিং রিপোর্ট; ২. ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশন: ট্রু কালার্স: হাউ বার্ডস সি দ্য ওয়ার্ল্ড; ৩. দ্য কেমিক্যাল গাইজ: বেস্ট মেথডস টু গেট বার্ড পুপ অব ইয়োর কারস পেইন্ট; ৪. রিডার্স ডাইজেস্ট