
শীত শীত আবহাওয়া মানেই চারদিকজুড়ে উৎসবের ধুম। এসব আয়োজনে সব সময়ই কি আর ভারী পোশাকগুলো মানায়? এই সময়ে বেছে নিতে পারেন তসর সিল্ক।
একটা সময় পর্যন্ত শুধু মধ্যবয়সীদের মধ্যেই ছিল তসরের জনপ্রিয়তা। তবে নানা নকশা আর মোটিফে উজ্জ্বল রঙে রাঙানো তসর এখন জনপ্রিয় সবার মাঝেই। ড্রেসিডেলের ডিজাইনার মায়া রহমান জানালেন, তসরের অমসৃণ ভাবটা দূর করতে এখন বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাতে আনা হচ্ছে মসৃণ ভাব। এক বলা হয় কুন্ডি। এ প্রক্রিয়ায় সাধারণত মাটিসহ তেঁতুলগাছের গুঁড়ি উঠিয়ে আনা হয়। এরপর হালকা পানিতে ভেজানো তসরের কাপড় কাগজে পেঁচিয়ে সেই গাছের শেকড়ের নিচে রাখা হয়। এবার গাছটাকে ওপর থেকে কাঠ দিয়ে পেটানো হয়। গাছের শেকড়ের রসে কাপড়ে অাসে উজ্জ্বল আভা। যার ফলে তসরের কাপড়ে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় ব্লক আর স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ।
এখন তসরের ওপর বাটিকের কাজও করা হচ্ছে। টাইডাইয়ের মাধ্যমে জাপানি শিবোরি নকশা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে তসর সিল্কে, যা এবার নতুন এনেছেন তাঁরা, জানালেন মায়া রহমান। এসব তো আছেই, তসর সিল্কে তৈরি পোশাকের কাটিংয়েও আনা যাচ্ছে ভিন্নতা। যেমন একটু ঝুল দেওয়া কাফতান টপ, সামনের দিকে ছোট আবার পেছনে লম্বা এমন কাটের টিউনিক আবার সামনেই দুই ধাপের কাটের কামিজও তৈরি হচ্ছে তসর সিল্কে।
বাজার ঘুরে দেখা গেল, শুধুই শাড়িই নয়, তসরের গজ কাপড়টাও এখন চলছে বেশ। লাল, নীল, মেরুন, সবুজ আর কালো রংয়ের তসরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জ্যামিতিক আর ফুলেল নকশা। একরঙা তসর কাপড়ে ভিন্ন ভিন্ন রঙের ব্যবহারে একই সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জ্যামিতিক আর ফুলেল মোটিফ। কিছু কাপড়ের পাড়ে থাকছে জমকালো কাজ। থাকছে দুই রঙা শেডের কাপড়ও। নীল আর কালোর মতো গাঢ় রঙের ব্যবহারে এসব কাপড়ে ওপরে থাকছে হালকা নকশি কাঁথার কাজ। আবার বলাকা সিল্ক আর মসলিনের সঙ্গে তসরের ব্যবহারে আনা হচ্ছে নতুনত্ব।
দোয়েল সিল্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এম আলমগীর জানালেন, তসর মূলত তৈরি হয় ভারতের আসাম ও চীনে। তসর উৎপাদনে যে সুতা ব্যবহৃত হয়, তা আমাদের দেশের আবহাওয়ায় তৈরির উপযোগী নয়। আর এ কারণেই রেশম সুতা দিয়েই অ্যান্ডি সিল্কে আনা হয় তসরের আভা। এটাকে বলা যেতে পারে তসরের দেশি একটা রূপ। তবে যাঁরা তসর কিনতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য সতর্কতা হিসেবে কাপড় কেনার সময় এর সুতা পুড়িয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। জানালেন, তসর তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটা বেশ ব্যয়বহুল, তাই অনেক জায়গায় তসরের বদলে ব্যবহার করা হচ্ছে পলিয়েস্টারের কাপড়। যদি সুতা থেকে রেশম পোকার পোড়া গন্ধ বের হয় এবং সুতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তখনই বুঝবেন এটা তসর।
কোথায় পাবেন
ড্রেসিডেলে চলছে তসর উৎসব। ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। এখানে নকশার ওপর নির্ভর করে শাড়ির দাম পড়বে ১০ হাজার থেকে ২৭ হাজার টাকা। টিউনিক আর লম্বা টপসের দামটা শুরু ৭০০০ থেকে। আর ১৭০০০ হাজার মধ্যেই পেয়ে যাবেন একটু জমকালো নকশার সালোয়ার-কামিজ। থাকছে ব্যাগের আয়োজন। চামড়ার সঙ্গে তসরের মিশ্রণে তৈরি এই ব্যাগগুলোর দাম পড়বে ১০০০০ টাকা। আর এদিকে দোয়েল সিল্কে গজপ্রতি ৪০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যেই মিলবে আপনার পছন্দসই তসর সিল্ক।