মেট গালাকে ধরা হয় ফ্যাশন-দুনিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন হিসেবে। খাবার মেনু থেকে শুরু করে আসনবিন্যাস, পোশাক এমনকি ছবি তোলাতেও আছে কড়াকড়ি। পুরো দুনিয়ার তারকারা এই আয়োজনে ঠিক কী করেন, তার পুরোটাই থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে। এত কড়াকড়ির পরও আশ্চর্যজনক দুই ঘটনা ঘটেছে এবারের মেট গালায়। ‘নো ফটো’ নিয়ম তো ভাঙা হয়েছেই, একই রকম পোশাকে দেখা গেছে দুই অভিনেত্রীকে!

মেট গালায় রাজকীয় অভিষেক হয়েছে পাঞ্জাবি অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জের। পাঞ্জাবি মহারাজের আদলে হাজির হয়েছিলেন মেট গালার মঞ্চে। কিন্তু দিলজিৎ পাদপ্রদীপের আলোয় যতটা না এলেন নিজের পোশাকের জন্য, তার চেয়ে বেশি আলোচিত হলেন ‘নো ফটো’ নিয়ম ভেঙে। তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে দেখা মিলেছে মেট গালার ভেতর ও বাইরের দৃশ্য।
দিলজিতের পোশাক তৈরি করা হয়েছিল পাতিয়ালার মহারাজার পোশাকের ধাঁচে। পাঞ্জাবি ঐতিহ্য ফুটে উঠেছে তাতে। ঐতিহ্যবাহী পাগড়ি ও তেহমাতের সঙ্গে ছিল তলোয়ার। তবে পোশাকের কারুকার্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তাঁর পোশাকে লেখা ছিল গুরমুখী বর্ণমালা, কেইপে আঁকা ছিল পাঞ্জাবের মানচিত্র। তবে দিলজিৎ চেয়েছিলেন পাতিয়ালার মহারাজের আসল নেকলেস ব্যবহার করতে। প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলারের নেকলেসটি ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। টাকার হিসাবে যার মূল্য প্রায় ৩ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। যে কারণে রেপ্লিকা হিসেবে ব্যবহার করেছেন আরেকটি নেকলেস।
দিলজিতের পোশাক যতটা না সাড়া ফেলেছে, তার চেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে তাঁর ইনস্টাগ্রাম স্টোরি। এই পাঞ্জাবি অভিনেতার স্টোরিতে ছিল তাঁর মেট গালা-যাত্রার বেশ কিছু দৃশ্য। পপতারকা শাকিরার সঙ্গে একই লিমুজিনে চড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে আসেন তিনি। এরপরের স্টোরিতে দিলজিৎকে দেখা যায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, নিক জোনাস ও শাকিরার সঙ্গে।
পরের আরেক স্টোরিতে ছিল সেলফি, যেখানে তাঁকে দেখা যাচ্ছে শাকিরাসহ আরও তিন তারকার সঙ্গে ডিনার টেবিলে। ছবিতে পপতারকা নিকোল শারজিঙ্গার ও দিলজিতের স্টাইলিশ প্রবাল গুরংও আছেন।
মেট গালার ভেতরে সাধারণত ছবি তোলার অনুমতি থাকে না। ছবি তুললেও তা নিজের কাছে রাখার নিয়ম। যে কারণে এর আগে তারকারা তেমন ছবিই প্রকাশ করেছিলেন, যা তোলা হয়েছিল ওয়াশরুমে। আর ওই ওয়াশরুমের কাচে তোলা সেলফিই হয়েছে ভাইরাল। দিলজিৎ সেই নিয়ম ভেঙে সরাসরি ডিনারের ছবি ভাইরাল করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
গত কয়েক বছর মেট গালার অন্যতম আকর্ষণ মার্কিন অভিনেত্রী জেনডায়া। অভিষেকের পর থেকে একের পর এক চমক দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ‘জোন অব আর্ক’, ‘সিন্ডারেলা’ থেকে শুরু করে এক বছরে ভিন্ন দুটি লুক; জেনডায়া মানেই যেন মেট গালায় তোলপাড়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। মেট গালায় শুভ্রতার প্রতীক হয়ে এসেছিলেন ‘স্পাইডার-ম্যান’খ্যাত এই অভিনেত্রী। ফ্যাশনের পাওয়ারহাউস জেনডায়ার পরনে ছিল থ্রি-পিস সাদা স্যুট। লুই ভুতোঁর ডিজাইন করা সাদা টেইলর স্যুট তৈরি করেছেন ডিজাইনার ফেরেল উইলিয়ামস। পোশাকের অনুপ্রেরণা নিয়েছেন জ্যামাইকান গায়ক গ্রেস জোন্স ও আমেরিকান ব্লুজ গায়ক গ্লাদিস বেন্টলির পোশাক থেকে। দুজনেই ছিলেন ব্ল্যাক ড্যান্ডিইজমের অন্যতম প্রবর্তক।
ব্ল্যাক ড্যান্ডিইজমের অন্যতম বড় উদ্ভাবন ছিল জুট স্টাইল। এতে নারীরা হাই ওয়েস্ট, টাইট-কাফ পোশাক পরে ছায়ামূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করতেন। থ্রি-পিস স্যুটের সঙ্গে জেনডায়ার পরনে ছিল সাদা হ্যাট ও টাই। বরাবরের মতো মেট গালার আলো কেড়ে নিয়েছেন তিনি। তবে জেনডায়া সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন ভিন্ন একটি কারণে। তাঁর মতো একই রকম পোশাকে মেট গালায় অভিষেক হয়েছে ‘শোগান’খ্যাত জাপানি অভিনেত্রী অ্যানা সাওয়াইয়ের।
৩২ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী মেট গালায় এসেছিলেন দিওরের তৈরি থ্রি-পিস স্যুটে। সঙ্গে ছিল সাদা টাই আর হ্যাট। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, জেনডায়া ও অ্যানার পোশাক একই রকম। কিন্তু না, দুজনের পোশাকে কিছুটা ফারাক আছে। প্রথম দেখায় তা স্পষ্ট হয় না। জেনডায়ার পোশাকে আছে বেশ কিছু কারুকার্য। এ ছাড়া অ্যানা সাওয়াইয়ের ট্রাউজার তুলনামূলক বেশি চওড়া। সাওয়াই অবশ্য এত কিছু ভেবে পোশাক বাছাই করেননি। তিনি চেয়েছিলেন সহজ একটা লুক, যে কারণে বেছে নিয়েছিলেন দিওরের সাদা স্যুট।
এত নিয়মকানুনের ভিড়ে একই বছর মেটের অন্দরমহলের দেখা পাওয়া এবং দুই তারকার পোশাক একই রকম হওয়া আশ্চর্যজনকই বটে!
সূত্র: পিপল ডটকম