কেন বেছে নেবেন ঢিলেঢালা পোশাক

ঢিলেঢালা পোশাকের ধারণা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। তবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে করোনা–পরবর্তী সময়ে। ৪ বছর পরে এসেও এর থেকে বের হতে পারেননি ফ্যাশনপ্রেমীরা।

কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে ঢিলেঢালা পোশাকেও স্টাইলিশ দেখাবে। নকশার আয়োজনে মডেল হয়েছেন এবারের ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ আকলিমা আতিকা কণিকা। সাজ: পারসোনা
ছবি: কবির হোসেন

২০১৯ সালের আগে থেকেই ওভারসাইজ (ঢিলেঢালা বা মাপের চেয়ে বড়) পোশাক দেখা যেতে শুরু করে। তবে করোনার পরে এসে ধারাটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ম্যাগাজিন হারপারস বাজার–এ ‘দ্য আন্ডারস্টেটেড পাওয়ার অব ওভারসাইজ ক্লথস’ শিরোনামের প্রতিবেদনে সেন্ট জনস ইউনিভার্সিটির ফ্যাশন স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক এমা ম্যাকক্লেনডন বলেন, ‘আমার মনে হয় করোনা মহামারি ওভারসাইজ স্টাইলের জনপ্রিয়তায় গভীর প্রভাব ফেলেছে।

সমাজে যখন বড় ধরনের সাংস্কৃতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, তখন তার প্রভাব পোশাকের গড়নেও পড়ে। ঠিক যেমন পরিবর্তন আমরা এখন দেখছি। লকডাউন আর ঘরে বসে কাজের সময় আমরা যেভাবে আরামদায়ক পোশাকে অভ্যস্ত হয়েছিলাম, তা আমাদের শরীরের সঙ্গে পোশাকের সম্পর্কটাই বদলে দিয়েছে। আমরা মাপ, ফিট আর স্পর্শ—সবকিছুকেই নতুনভাবে অনুভব করতে শিখেছি।’

বাইরে পরার বড় আকারের এই পোশাকগুলোয়ও কিন্তু একটা আকার দেওয়া থাকে। পোশাক: মুমু মারিয়া

চার বছর পরও এই ধারাতে মজে আছেন ফ্যাশনপ্রেমীরা। পাশ্চাত্যের তারকারাও নিয়মিত পরছেন ওভারসাইজ পোশাক। তাঁদের দেখাদেখি আঁটসাঁট কাটের পোশাক আর উঁচু হিলের বদলে বেছে নেওয়া হচ্ছে ঢিলেঢালা ম্যাক্সি ড্রেস আর ব্যালে জুতা; যেখানে আছে স্বাধীনতা, আরাম আর একধরনের অনায়াস সৌন্দর্য। আসলে পোশাকের গতানুগতিক ছন্দ থেকে বের হয়ে আসাটাই একটা চমক তৈরি করেছিল বলে বিশ্বাস করেন বিশেষজ্ঞরা। এটিকে কীভাবে আরও স্টাইলিশভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেটাই এখন চ্যালেঞ্জ।

অতিরিক্ত বড় আকারের ফ্যাশনের মূল সৌন্দর্যই হলো নিজেকে প্রকাশ, নিজের মতো করে। একদিকে আছে রুচিশীল এবং পরিশীলিত ওভারসাইজ পোশাক, যেটা বানানোই হয় দাওয়াতে, কর্মক্ষেত্রে কিংবা ঘোরার সময় পরার জন্য। অন্যদিকে লাউঞ্জওয়্যার বা হুডি-টি-শার্ট বাইরে পরা হলেও এগুলো ঠিক দাওয়াতের পোশাক নয়। এই পার্থক্যটা বুঝতে পারলে স্টাইল করার সময় সমস্যা কম হবে।

ওভারসাইজ পোশাকেও গড়ন বোঝানো

ঢিলেঢালা ক্রপটপে পাওয়া যাবে আরাম। পোশাক: তান

ওভারসাইজ পোশাক পরা মানেই কিন্তু তিন সাইজ বড় পোশাক নয়। মূল কৌশল হলো আয়তন ও গড়নের মধ্যে একটা ভারসাম্য, যাতে আরাম থাকবে, আবার শরীরের কাঠামোও বেঢপ লাগবে না। বাইরে পরার বড় আকারের এই পোশাকগুলোয়ও কিন্তু একটা আকার দেওয়া থাকে। সে কারণেই সেটি স্টাইলিশ লাগে।

ফ্যাশন নিয়ম ভাঙতে পছন্দ করে। অতিরিক্ত বড় আকারের পোশাক লম্বারাই পরতে পারবেন, বিষয়টি তা নয়। খাটো এবং ভারী শারীরিক গঠনের অধিকারীরাও পরতে পারবেন। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাকে তাঁদেরও স্টাইলিশ লাগবে।

চলুন ওভারসাইজ পোশাক পরার আগে কিছু সাধারণ নিয়ম জেনে নিই।

এ ধরনের পোশাক পরতে পারবেন যে কেউই। স্থান কৃতজ্ঞতা: স্কাই লাউঞ্জ।

১. সঠিক মাপের বটম

ওপরের পোশাকটা যদি ঢিলেঢালা হয়, তাহলে নিচে পরুন সঠিক মাপের জিনস বা ফিটেড স্কার্ট। তুলনামূলক আঁটসাঁট লেগিংস কিংবা প্যান্টের সঙ্গেও পরতে পারেন ওভারসাইজ টি-শার্ট বা জাম্পার। আবার নিচের অংশের পোশাকও হতে পারে ঢিলেঢালা। তাহলে দুটোর কাটছাঁটে থাকতে হবে কিছুটা ভিন্নতা। নিচেও যদি ঢোলা সালোয়ার পরি, তাহলে ওপরেরটা ক্রপটপ স্টাইলের রাখুন। টপ ঢিলে হলেও তখন দেখতে খারাপ লাগবে না।

২. কোমর স্পষ্ট করুন

এখানে আপনার সেরা বন্ধু হতে পারে বেল্ট। ঢিলেঢালা ভাব বজায় রেখেও এটা পোশাকে কাঠামো যোগ করে। ওভারসাইজ ড্রেস বা স্কার্টের ওপর বেল্ট বাঁধলে গড়নটা সুন্দর দেখায়। চওড়া প্যান্ট পরলে, শার্টের অর্ধেক অংশ কোমরে গুঁজে দিন। তাতে কোমর হাইলাইট হবে।

৩. লেয়ারিং করুন

ঢিলেঢালা প্যান্ট, ব্লেজার বা জ্যাকেটের সঙ্গে ফিটেড টপ পরুন। এতে সাজে একটা স্মার্ট, পরিশীলিত ভাব আসবে।

পোশাকের যেখানে ভলিউম চান, সেখানে ঢিলেঢালা রাখুন

শরীরের গড়ন বুঝে ওভারসাইজ

সব আকারের অধিকারীরা পরতে পারেন। শুধু জানতে হবে কার জন্য কোন ধরনের ওভারসাইজ মানানসই।

আওয়ারগ্লাস গড়ন (ওপর এবং নিচের অংশ ভারী, কোমর তুলনামূলক সরু)

ওভারসাইজ ব্লেজার বা শার্টের সঙ্গে বেল্ট ব্যবহার করুন। এতে কোমরের গঠন ফুটে উঠবে সুন্দর করে। গড়ন ভারসাম্যপূর্ণ দেখাবে।

জানতে হবে কার জন্য কোন ধরনের ওভারসাইজ মানানসই।

আয়তাকার গড়ন

যেখানে ভলিউম চান, সেখানে ঢিলেঢালা রাখুন। এ ধরনের শারীরিক গঠনের অধিকারীদের প্লিটওয়ালা চওড়া প্যান্ট বা বক্সি সোয়েটশার্ট মানায় ভালো।

উল্টা ত্রিভুজ গড়ন (ওপরের অংশ ভারী, নিচের অংশ তুলনামূলক সরু)

  • চওড়া কাঁধের ভারসাম্য আনতে নিচের অংশে ভলিউম দিতে পারেন। যেমন চওড়া প্যান্ট, ঢেউখেলানো স্কার্ট বা কুচি দেওয়া সালোয়ার। ওপরের পোশাকটা রাখুন কিছুটা আঁটসাঁট।

    নাশপাতি গড়ন (শরীরের নিচের অংশ তুলনামূলকভাবে ভারী, ওপরের অংশ সরু)

  • শরীরের ওপরের অংশে মনোযোগ নিয়ে আসুন। বেছে নিন ওভারসাইজ টপ বা জ্যাকেট। কাঁধে হালকা প্যাড দেওয়া ব্লেজার এ মৌসুমে বেশ জনপ্রিয়তা পাবে।

    ডিম্বাকৃতি গড়ন (শরীরের মধ্যভাগ তুলনামূলকভাবে ভরাট, কোমরের অংশ গোলাকার, হাত-পা বা বুকের অংশ তুলনামূলকভাবে সরু)

  • হালকা কাপড়ের ঢিলেঢালা শার্ট বা প্রশস্ত ড্রেসের মতো পোশাক মানাবে।

ওভারসাইজ লুকে আসে স্বতঃস্ফূর্ত ভাব

সবচেয়ে জরুরি কথা

ওভারসাইজ লুকের একটা বড় সৌন্দর্য হলো ‘সুচিন্তিত অগোছালো ভাব’, অর্থাৎ দেখতে লাগবে স্বতঃস্ফূর্ত, কিন্তু আসলে পুরো লুকেই থাকবে পরিকল্পনা। সঠিক পোশাকটি বেছে নিলেই পুরো লুকে নিয়ে আসবে ভিন্নতা।

যাঁরা নতুন করে ওভারসাইজ ট্রেন্ডে ঢুকছেন, তাঁদের জন্য ভালো একটা অপশন হতে পারে ব্লেজার। এটা চিরায়ত, যেকোনো পোশাকেই নিয়ে আসে ভাবগাম্ভীর্য। পোশাকে যদি একটু বড় কাট নেন, পুরো সাজেই চলে আসবে নতুনত্ব আর আত্মবিশ্বাস।

সূত্র: হারপারস বাজার, ড্রেস ইয়োর কালার, লুকিইরো