
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস বিরল কোনো রোগ নয়। বিশ্বে প্রতি ১০ নারীর মধ্যে একজন এতে আক্রান্ত। সাধারণত ২১ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পিরিয়ডের স্বাভাবিক সময়। পিসিওএসে আক্রান্ত হলে দুই মাস বা তিন মাস পর পর পিরিয়ড হয়। এ সমস্যায় আক্রান্ত ৫০ শতাংশ নারীই ওবিস। অর্থাৎ তাঁদের ওজন ও বিএমআই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। বিএমআই ২৫ থেকে ৩০ হলে ওভারওয়েট এবং ৩০–এর বেশি হলে ওবিস বলা হয়। তাঁদের ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায় যে ওষুধ না খেলে পিরিয়ড হয় না।
রাজধানীর ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের বিশেষজ্ঞ আফজালুন্নেসা চৌধুরী বললেন, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস একটি অ্যান্ডোক্রিন সিস্টেম ডিসঅর্ডার। এই অবস্থায় ওভারিতে প্রচুর অ্যান্ডোজেন তৈরি হয়, যা ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে। মেয়েদের শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়। একাধিক সিস্টকে একসঙ্গে বলা হয় পলিসিসিস্ট। এই সিস্টগুলো ওভারির অরগ্যানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সাধারণত জিন ও পরিবেশগত কারণে এটি বেশি হয়ে থাকে।
• পলিসিস্টিক ওভারির বড় একটি লক্ষণ অনিয়মিত পিরিয়ড। বছরে দুই-তিনবার বা তার চেয়ে কমও হতে পারে।
• মেন্সট্রুয়াল সাইকেল বা পিরিয়ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
• পিসিওএসে আক্রান্ত অনেকেরই পরপর ও একাধিকবার পিরিয়ড মিস হয়। যখন পিরিয়ড হয়, তখন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রক্তপাত হয়।
• পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম গ্লুকোজ অসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ওজন বেড়ে স্থূলতা দেখা দিতে পারে।
• মুখ, পিঠ, বুকসহ শরীরে হঠাৎ প্রচুর ব্রণ দেখা দিতে পারে।
• ঘাড়, গলা, কুঁচকি ও শরীরের বিভিন্ন অংশ অতিরিক্ত কালো হয়ে যেতে পারে।
• হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে।
• দেহে অবাঞ্ছিত লোম বেড়ে যেতে পারে।
• মাথার কিছু অংশের চুল অতিরিক্ত পাতলা হয়ে যেতে পারে বা চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে।
পিসিওএসের সমস্যায় অনেক চিকিৎসক জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেন। এর বিশেষ ফর্মুলা ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের ক্ষরণ বাড়াতে সাহায্য করে। এই দুটি হরমোনের ক্ষরণই অ্যান্ড্রোজেনের ক্ষরণ কমিয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণে সাহায্য করে। পিসিওএসের আসলে তেমন কোনো প্রতিকার নেই। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হরমোনাল সাইকেল ঠিক করার মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। হরমোনাল সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে ডার্ক চকলেট খাওয়া যেতে পারে। ওজন কমিয়ে বিএমআই ২৫-এর নিচে রাখলে, ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যেতে পারে।