স্ফিগমোম্যানোমিটার। চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয় ‘বিপি (ব্লাড প্রেশার) মেশিন’। রোগীর কাছে পরিচয় ‘প্রেশার মাপার যন্ত্র’। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকের চেম্বারে এ যন্ত্র দিয়ে রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়। আজকাল অনেকে এটি বাড়িতেও রাখেন।
নামকরণ ও কর্মপদ্ধতি
গ্রিক শব্দ ‘Sphygmos’ (স্পন্দন) এবং বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ‘Manometer’-এর (চাপমানযন্ত্র) সমন্বয়ে ‘স্ফিগমোম্যানোমিটার’ শব্দটির উৎপত্তি। নাম থেকে যন্ত্রটির কাজ বোঝা যায় সহজেই।
এই যন্ত্রে একটি ম্যানোমিটার এবং কাপড়ের টিউবে মোড়ানো একটি প্রসারণক্ষম কাফ তথা হস্তবন্ধনী থাকে। কাফ ধমনির রক্তপ্রবাহে চাপ সৃষ্টি করে। ম্যানোমিটার এই রক্তচাপ পরিমাপ করে। রক্তপ্রবাহ শুরু হয় যে চাপে, তাকে বলে সিস্টোলিক চাপ। যে চাপে রক্তপ্রবাহ পরিপূর্ণভাবে বাধামুক্ত হয়, তাকে বলে ডায়াস্টোলিক চাপ।
এই সিস্টোল ও ডায়াস্টোলের মধ্যবর্তী সময়ে একধরনের শব্দ হয়, যাকে বলে ‘করোটকফ সাউন্ড’। নির্ভুল মান পেতে এই শব্দ নিখুঁতভাবে শোনা জরুরি। এ জন্য স্ফিগমোম্যানোমিটারের সঙ্গে স্টেথোসকোপ ব্যবহার করা হয়।
আবিষ্কার
স্ফিগমোম্যানোমিটার প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৮৮১ সালে। আবিষ্কার করেন অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক স্যামুয়েল সিগফ্রিড কার্ল রিটার ভন বাস্ক। এরপর একাধিকজনের হাত ধরে বর্তমান রূপে এসে পৌঁছেছে যন্ত্রটি। ১৮৯৬ সালে ইতালিয়ান শিশুচিকিৎসক স্কিপিয়ন রিভা-রকি এটিকে আরও সহজে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন। ১৯০১ সালে, নিউরোসার্জন হার্ভে কুশিং এর আধুনিকতর রূপ উপহার দেন এবং তখন থেকেই চিকিৎসাজগতে রীতিমতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যন্ত্রটি।
স্ফিগমোম্যানোমিটারের রকমফের
মূলত দুই ধরনের স্ফিগমোম্যানোমিটার বা বিপি মেশিন রয়েছে।
১. ম্যানুয়াল স্ফিগমোম্যানোমিটার: এতে স্পন্দনের শব্দ শোনার জন্য টেলিস্কোপের দরকার হয়। এর আবার দুটি ধরন আছে—
• মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটার: পারদস্তম্ভের উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে রক্তচাপ পরিমাপ করার যন্ত্রকে বলে মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটার।
• অ্যানেরয়েড স্ফিগমোম্যানোমিটার: এটি মার্কারি স্ফিগমোম্যানোমিটারের তুলনায় অধিকতর নিরাপদ।
২. ডিজিটাল স্ফিগমোম্যানোমিটার: প্রেশার সেন্সর ও মাইক্রোপ্রসেসরের সমন্বয়ে এটি একধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই এটি ব্যবহার করা যায়। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না।