সচেতনতার অভাবে প্রাথমিক দাঁত বা শিশুর দুধদাঁত অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুধদাঁতের স্থায়িত্বকাল অল্প হলেও এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। দুধদাঁতের শিকড়ের নিচে স্থায়ী দাঁতের গঠন শুরু হয়। কাজেই দুধদাঁতের সংক্রমণ স্থায়ী দাঁতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ ছাড়া স্পস্ট উচ্চারণ, চোয়ালের গঠন ও মুখের আকৃতি ঠিক রাখা এবং স্থায়ী দাঁত সঠিক জায়গায় গজানোর বিষয়টিও দুধদাঁতের ওপর নির্ভরশীল। শিশুর স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশসহ মানসিক বিকাশেও দুধদাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শিশুর দাতেঁর যত্নে সচেতন থাকতে হবে সব সময়।
সাধারণত নিচের মাড়ির সামনের দিকের ৪টি দাঁত ওঠে ৬ থেকে ৯ মাস বয়সে। আর ওপরের মাড়ির সামনের দিকের ৪টি দাঁত ওঠে শিশুর ৭ থেকে ১০ মাস বয়সে। এগুলো ৬ বছর থেকে ৯ বছর বয়সের মধ্যে পড়ে স্থায়ী দাঁত গজায়। ওপরের ও নিচের মাড়ির সামনের ৪ দাঁতের দুই পাশে একটি করে ৪টি দাঁত ওঠে ১৬ থেকে ২০ মাস বয়সে, আর পড়ে ৯ থেকে ১২ বছর বয়সে। ওপরের ও নিচের মাড়ির দুই পাশের ৮টি দাঁতের মধ্যে প্রথমটি ওঠে ১২ থেকে ১৬ মাস বয়সে, পড়ে ৯ থেকে ১০ বছর বয়সে। দ্বিতীয় দাঁত ওঠে ২০ থেকে ২৪ মাসে, আর পড়ে ১১ থেকে ১২ বছর বয়সে। এভাবে ২০টি দুধদাঁত পড়ে ৩২টি স্থায়ী দাঁত ওঠে। সঠিক সময়ে দাঁত ওঠার জন্য শিশুকে বিভিন্ন ধরনের খাবার চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করাতে হবে।
গর্ভধারণের ছয় সপ্তাহ থেকে গর্ভস্থ শিশুর দাঁতের গঠনপ্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই গর্ভাবস্থায় খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও ক্যালসিয়াম নিশ্চিত করতে হবে। শিশুর দাঁত ওঠার আগে পরিষ্কার সুতি কাপড় উষ্ণ পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। দাঁত ওঠার পর নরম বেবি টুথ ব্রাশ দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে দাঁত ও জিহ্বা পরিষ্কার করতে হবে। বেবি টুথ পেস্ট না পেলে বা খেয়ে ফেলার আশঙ্কা থাকলে পেস্ট না দিলেও চলবে। দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বুকের দুধের বিকল্প নেই। ঘুমের মধ্যে ফিডারের ব্যবহার দাঁতের ক্ষতি করে। শিশুর সামনে বড়রা দাঁত ব্রাশ করলে তারাও উৎসাহিত হয়।
শিশুর স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, প্রাণচঞ্চলতা, লেখাপড়ায় মনোনিবেশসহ মানসিক বিকাশেও দুধদাঁত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে
দাঁতের যত্নে শিশুর খাদ্যাভ্যাসও গুরুত্বপূর্ণ। চিনি, কৃত্রিম জুস, কোমল পানীয়, মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম, চিপস দাঁত ক্ষয় করে। এগুলোর পরিবর্তে ফরমালিনমুক্ত তাজা মৌসুমী ফল, ফলের জুস, শাকসবজি, ডিম, দুধ, মাছ-মাংস খাওয়াতে হবে শিশুকে। দাঁতে গর্তসহ জিহ্বার ওপর সাদা প্রলেপ (ছত্রাকের সংক্রমণ) বা কোনো ক্ষত দেখলে দ্রুত দাঁতের চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
অনেকে ভাবেন, দুধদাঁত তো পড়েই যাবে, এর চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু দুধদাঁতের সুস্বাস্থ্যের ওপর স্থায়ী দাতের সুরক্ষা অনেকটাই নির্ভরশীল। কাজেই দুধদাঁত আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করাতে হবে। এখন দুধদাঁতের সর্বাধুনিক নিরাপদ চিকিৎসাপদ্ধতি আছে। শিশুরা সহযোগিতা না করলেও কার্যকর চিকিৎসাব্যবস্থা আছে। ব্যথামুক্ত চিকিৎসাসেবা দেওয়াও সম্ভব। সমস্যার শুরুতে চিকিৎসা নিলে অল্প সময়েই তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কাজেই শিশুর দুধদাঁতের কোনো রোগকে পুষে না রেখে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দিয়ে জটিলতা বাড়ানো ঠিক নয়।