ইউরেথ্রাল সিনড্রোম চিকিৎসার জন্য জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সঙ্গে করতে হবে চিকিৎসাও।

কারও কারও, বিশেষ করে অনেক নারী দিনের পর দিন মূত্রনালির প্রদাহজনিত নানা রকম অস্বস্তিতে ভুগছেন। বারবার মূত্র পরীক্ষা করেছেন, কিন্তু কোনো সংক্রমণ ধরা পড়ছে না। এ ধরনের সমস্যাকে ইউরেথ্রাল সিনড্রোম বলা হয়। এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে এই সমস্যার সঙ্গে সংক্রমণের কোনো যোগ নেই। অনেকে প্রস্রাবে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া হলেই অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে ফেলেন। কিন্তু এটি আদৌ কোনো সংক্রমণ না–ও হতে পারে। সংক্রমণ নিশ্চিত হতে সাধারণত ইউরিন কালচার পরীক্ষা করা দরকার। আর সংক্রমণ ছাড়াও এ রকম উপসর্গ হতে পারে। এটাই হলো ইউরেথ্রাল সিনড্রোম। সব বয়সের ব্যক্তিরাই এ রেগে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু নারীদের এটি বেশি হয়।
ইউরেথ্রাল সিনড্রোমের কিছু সম্ভাব্য কারণ হলো প্রস্রাবের পথ সরু হয়ে যাওয়া অথবা কোনো আঘাত, মূত্রনালির চোট, কেমোথেরাপি অথবা রেডিয়েশন, ক্যাফেইনসমৃদ্ধ পানীয় (চা, কফি) পান, পারফিউম, সাবান, স্যানিটারি ন্যাপকিনের মতো সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার, শুক্রাণুনাশক জেলি ব্যবহার, সহবাস, বাইকে চড়া, যৌনবাহিত রোগ ইত্যাদি।
প্রস্রাবের সময় ব্যথা করা, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ, হঠাৎ করে তীব্র প্রস্রাবের বেগ, তলপেট ও কোমরের মাঝামাঝিতে ব্যথা অনুভব, কুঁচকি ফোলা, সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব ইত্যাদি । পুরুষদের মধ্যে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন অণ্ডকোষ ফুলে যাওয়া, বীর্য বের হওয়ার সময় ব্যথা।
ইউরেথ্রাল সিনড্রোম চিকিৎসার জন্য জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সঙ্গে করতে হবে চিকিৎসাও। সে ক্ষেত্রে সুগন্ধি সাবান, দীর্ঘক্ষণ বাইকে চড়া ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে। চিকিৎসক সমস্যা ও উপসর্গ বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিস্পাসমোডিক, অ্যানেসথেটিক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, আলফা-ব্লকার গ্রুপের ওষুধ দিয়ে থাকেন। আন্দাজে নিজে নিজে ওষুধ সেবন করবেন না। বিশেষ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে। সাধারণত মূত্রনালি সংকুচিত হয়ে গেলে তখন এটা করা হয়।
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় পান; অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এবং অ্যাসিডিক খাবার পরিহার; চা, কফি, কোমল পানীয় অতিরিক্ত সেবন পরিহার; ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ রাখা; যেসব প্রসাধনীর ব্যবহারে মূত্রনালির প্রদাহ বেড়ে যায়, সেগুলো ব্যবহার না করা; সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার; সহবাসের পরপর মূত্রত্যাগ; যৌনবাহিত রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলে পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া; আঁটসাঁট কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকা; সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার করা।
ডা. নওসাবাহ্ নূর, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, পপুলার মেডিকেল কলেজ