
গত কয়েক দশকে সংক্রামক ব্যাধি ছিল আমাদের দেশের মৃত্যুর কারণগুলোর শীর্ষে। কিন্তু গত দুই দশক অসংক্রামক ব্যাধি বিশেষত হৃদ্রোগ মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন উপাত্ত বলছে, বর্তমানে সাধারণ মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ ২০ শতাংশ এবং বিভিন্ন হৃদ্রোগের ব্যাপকতা সাড়ে ৪ শতাংশ। আমাদের গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে হার্ট ফেইলিউর বা হৃদ্যন্ত্রের পাম্প করার অক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে।
হৃদ্রোগের ব্যাপকতার কারণ
হৃদ্রোগী শনাক্তের হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। নগরায়ণের ফলে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হৃদ্রোগের ঝুঁকির বিস্তার লাভ। মানুষের কায়িক শ্রম অনেক কমে এসেছে; খাদ্যাভ্যাসে অস্বাস্থ্যকর খাবারের অগ্রাধিকার; শহরের জীবনে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ—এসবই হৃদ্রোগের ব্যাপকতা বাড়িয়ে চলছে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমাতে
আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত হৃদ্রোগ প্রতিহত করা। সেটা সম্ভব যদি আমরা হৃদ্রোগের চিহ্নিত ঝুঁকিগুলো কমিয়ে আনতে পারি। এ জন্য ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের (জর্দা ও গুল) বিরুদ্ধে প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। কায়িক শ্রম উৎসাহিত করতে হবে। সম্ভব হলে বাহন ব্যবহার না করে হাঁটা এবং লিফটে না উঠে সিঁড়ির ব্যবহার আমাদের কায়িক শ্রমে অভ্যস্ত করে তুলবে। খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ চর্বি বা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ এখনকার চিকিৎসা ব্যবস্থায় সহজ ও নিরাপদ। এগুলোকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করে হৃদ্রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিকারই শ্রেয়
দেশে হৃদ্রোগের চিকিৎসা সহজলভ্য হলেও ব্যয়বহুল। হৃদ্রোগ হওয়ার পরে হৃদ্রোগের পুনঃচিকিৎসা বহু ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। অন্যদিকে হৃদ্রোগ প্রতিকার সহজ। কাজেই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত হৃদ্রোগ যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করা।
এ ছাড়া যাদের হৃদ্রোগ শনাক্ত হচ্ছে, তাদের প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই সুফল পাওয়া যায়। শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে বুকে ব্যথা হওয়া, শ্বাসকষ্ট, অত্যধিক ঘাম—এগুলো হৃদ্রোগের লক্ষণ। যাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি রয়েছে, তাঁদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে উচিত দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ কার্ডিয়াক সোসাইটি