ওজন কমানোর জন্য বাজারে অনেক রকম ফুড সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যা বেশ ব্যয়বহুল
ওজন কমানোর জন্য বাজারে অনেক রকম ফুড সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যা বেশ ব্যয়বহুল

ওজন কমানোর ফুড সাপ্লিমেন্ট কি কার্যকর ও নিরাপদ?

বিকল্প হিসেবে বর্তমানে নানা রকমের ফুড, প্রোটিন ও ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ওজন কমানোর জন্য বাজারে অনেক রকম ফুড সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়, যা বেশ ব্যয়বহুল। ওজন কমানোর জন্য এসব পণ্যের প্রচার–প্রচারণায় দেওয়া হয়ে থাকে আকর্ষণীয় তথ্য। কিন্তু আসলেই কি এগুলো কার্যকর ও নিরাপদ?

প্রতিটি ফুড সাপ্লিমেন্টের ক্ষেত্রে বলা হয়, এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম, ৩০ থেকে ৩৫–এর মধ্যে। আরও বলা হয়, এটি একটি ব্যালান্সড ডায়েটের (সুষম খাবার) ফর্মুলায় তৈরি করা, যা শরীরের সব পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করবে। এগুলো উচ্চ ফাইবার–সমৃদ্ধ—এমন তথ্যও প্রচার করা হয়।

ওজন কমাতে যা জরুরি

  • চিকিৎসক ও গবেষকেরা বলেন, ওজন কমাতে সঠিক সুষম ডায়েট পরিকল্পনা ও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়ামের বিকল্প নেই।

  • পরিবারের জন্য প্রস্তুত সাধারণ ও স্বাভাবিক খাবারই পরিমিত পরিমাণে ও ভারসাম্য বজায় রেখে খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব।

  • ওজন কমাতে চাইলে নিত্যদিনের সুষম খাদ্য পরিকল্পনায় লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং উচ্চ ফাইবার–সমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে।

  • বাদ দিতে হবে উচ্চ ক্যালরি ও উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার।

  • পাশাপাশি চাই কায়িক শ্রম ও ক্যালরি ক্ষয়। ব্যস, এটাই যথেষ্ট। 

ওজন কমাবে যেসব খাবার

আমাদের চারপাশে এমন অনেক সস্তা খাবার আছে, যেগুলো লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, লো-গ্লাইসেমিক লোড, উচ্চ ফাইবারযুক্ত। আমরা ওজন কমানোর উদ্দেশ্যে এই খাবারগুলো বেছে নিতে পারি।

যেমন বার্লি আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ২৫ থেকে ৩০–এর মধ্যে, যা বাজারে প্রচলিত যেকোনো ফুড সাপ্লিমেন্ট অপেক্ষা অনেক কম। আবার লাল আটা, লাল চাল এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও বেশ কম, ৪০ থেকে ৫০–এর মধ্যে।

এসব খাবার লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পাশাপাশি উচ্চ ফাইবার–সমৃদ্ধ। এ ছাড়া আপেল, বেরি, পেঁপে, পেয়ারা এগুলোর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম। সব ধরনের ডাল ও বাদামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্সও অনেক কম।

আমাদের চারপাশে এমন অনেক সস্তা খাবার আছে, যেগুলো লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, লো-গ্লাইসেমিক লোড, উচ্চ ফাইবারযুক্ত

আলু, কচু, ওল, মানকচু, মিষ্টিকুমড়া ও কলা ছাড়া প্রায় সব সবজির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড অনেক কম।

দুধ এমন একটি সুষম খাবার, যার মধ্যে সব ধরনের পুষ্টিগুণ আছে। দুধের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৩৫–এর কাছাকাছি, যা অত্যন্ত কম। 

ফুড সাপ্লিমেন্টে বিদ্যমান সব ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা আমরা আমাদের দেশি ফলমূল ও শাকসবজি থেকে পূরণ করতে পারি।

যেমন একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম ও পুরুষের ৯০ মিলিগ্রামের মতো ভিটামিন ‘সি’ দরকার হয়।

প্রতিদিন মাত্র ২০ থেকে ২৫ গ্রাম আমলকী বা ১০০ গ্রাম আমড়া বা ১টি মাঝারি সাইজের পেয়ারা খেলেই আমাদের প্রতিদিনের ভিটামিন সির চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে।

কখন ফুড সাপ্লিমেন্ট দরকার

  • শক্ত খাবার চিবিয়ে খেতে পারছেন না বা আইসিইউ বা সিসিইউয়ে ভর্তি মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে ফুড সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • তবে নিজে নিজে কোনো সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যাবে না। তাতে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

  • বিনা প্রয়োজনে ফুড সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যাবে না। অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।


মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল