
আপনি হয়তো লেখাটা পড়ছেন মুঠোফোন কিংবা কম্পিউটারে। হয়তো ঘাড়টা একটু সামনে ঝুঁকিয়ে রেখেছেন নিজের অজান্তেই। লেখাটা পড়ার আগেই সোজা হয়ে বসুন। সোজা হয়ে না বসার বিপদগুলো জানেন তো? এ বিষয়ে রাফিয়া আলমকে জানিয়েছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
আমাদের মেরুদণ্ড স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা ঢেউখেলানো। আমরা যখন সোজাভাবে থাকি, তখন এই স্বাভাবিক গড়নটা বজায় থাকে। ঝুঁকে বসাটা সাময়িকভাবে আরামদায়ক মনে হলেও আদতে তা বিপজ্জনক এক অভ্যাস।
ঝুঁকে বসার অভ্যাসের কারণে বহু মানুষ ঘাড়, পিঠ, কোমর বা কাঁধের ব্যথায় ভোগেন। ঝুঁকে থাকার ফলে এসব অংশের পেশিতে টান ধরে থাকে, যা বেশ অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক। কিছুদিন পরপরই এ ধরনের ব্যথা এবং অস্বস্তিতে ভুগতে হয় তাঁদের। কারও কারও আবার ঘাড়ের পেশিতে অস্বাভাবিক টানের কারণে মাথাব্যথাও হতে পারে।
আমাদের মেরুদণ্ড ৩৩টি আলাদা আলাদা হাড় দিয়ে তৈরি হয়। এসব হাড়ের মাঝে যেসব জয়েন্ট বা জোড়া থাকে, সেসব ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে ঝুঁকে থাকার অভ্যাসের কারণে। আর স্বাভাবিকভাবেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে।
তাই একসময় অল্প আঘাতেই এসব হাড় বা জয়েন্ট খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত একটু ভারী কিছু তোলার সময় এমন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। ঝুঁকে কাজ করার আরেকটি মারাত্মক ঝুঁকি হলো এই অভ্যাসের কারণে একসময় পুরো মেরুদণ্ডের গড়নটাই সামনের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। অর্থাৎ কুঁজো হয়ে যেতে পারেন আপনি।
সামনে ঝুঁকে থাকার প্রবণতার কারণে দেহের বিভিন্ন অংশের পেশিতে টান ধরে থাকে। তুলনামূলক কম কাজ করলেও পেশি টান ধরে থাকার ফলে আপনি ক্লান্ত বা অবসন্ন বোধ করতে পারেন।
ঝুঁকে থাকলে আপনাকে দেখেও মনে হতে পারে আপনি ক্লান্ত। কিংবা মনে হতে পারে আপনার আত্মবিশ্বাস কম। বুঝতেই পারছেন, অফিসে ঝুঁকে বসে থাকাটা একটি নেতিবাচক দেহভঙ্গি।
ঝুঁকে থাকলে পেট সামনের দিকে কিছুটা এগিয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনার পেটে যদি মেদ থাকে, তাহলে তা একটু বেশিই চোখে পড়বে এ অবস্থায়।
কারও কারও চিবুকের নিচে বাড়তি একটা স্তর দেখা যায়। একে বলা হয় ‘ডাবল চিন’। সামনের দিকে ঝুঁকে থাকলে এই ডাবল চিনও প্রকটভাবে চোখে পড়তে পারে।
বুঝতেই পারছেন, বিপদ থেকে বাঁচতে আপনাকে সব সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখতে হবে। বসা, দাঁড়ানো, হাঁটা, ওজন তোলা প্রভৃতির জন্য নির্দিষ্ট দেহভঙ্গি রয়েছে, যা সব সময় খেয়াল রাখা উচিত।
যে বিষয়টি সব কাজের দেহভঙ্গির ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা বজায় রাখা। কাঁধ সোজা রাখুন সব সময়। মেরুদণ্ডও রাখুন ঋজু। ঘাড় বা পিঠ ঝোঁকাবেন না।
সোজা হয়ে থাকার ব্যাপারটা আদতে খুব একটা কঠিন নয়। অভ্যাস করে ফেললে তা একসময় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হবে।
দেহের ওপরের অংশ এবং পিঠের পেশির দৃঢ়তা বাড়াতে ব্যায়ামের চর্চা করাও প্রয়োজন। তাতে দেহভঙ্গি ঠিক রাখা সহজ হয়। বিশেষত নারীদের এ ধরনের ব্যায়ামের চর্চা করা জরুরি। কারণ, আমাদের দেশে যেকোনো বয়সেই খেলাধুলা বা ব্যায়ামের সুযোগ তুলনামূলক কম পান তাঁরা।
তাই এ অংশের পেশির দৃঢ়তা সেভাবে গড়েই ওঠে না। সবার জন্যই তাই শৈশব থেকে খেলাধুলার অভ্যাস করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৈশোরে দেহগঠনের সময়কার সংকোচ বা জড়সড়ভাবের কারণে অনেকে কুঁজো হয়ে থাকেন। এই অভ্যাসও ক্ষতিকর।