শিশুরা প্রাণবন্ত থাকবে—এটাই স্বাভাবিক
শিশুরা প্রাণবন্ত থাকবে—এটাই স্বাভাবিক

শিশু অতি সক্রিয় বা বেশি চঞ্চল হলে করণীয় কী

শিশুরা প্রাণবন্ত থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো মনে হয় বাচ্চাটার ‘অন বাটন’ বুঝি সব সময় অন থাকে! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দৌড়ঝাঁপ, কথা বলা, অস্থিরতা—কিছুই থামে না। মা-বাবারা বলেন, শিশুটি এত চঞ্চল, এটা কি স্বাভাবিক, নাকি কোনো সমস্যা। আসলে চঞ্চলতা সব সময় সমস্যা নয়। তবে শিশুর অতি সক্রিয়তা বা হাইপারঅ্যাকটিভিটি বোঝা ও তাকে সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া জরুরি।

শিশুর অতি সক্রিয়তার সাধারণ লক্ষণ

  • এক জায়গায় বসে থাকতে না পারা।

  • কথা বলতে বলতে অন্যের কথা কেটে বলা।

  • হঠাৎ মাথায় যা আসে, তা-ই করে ফেলা।

  • মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা।

  • কাজ শুরু করে ফেলে রাখা ও অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া।

  • অতিরিক্ত দৌড়ঝাঁপ বা লাফালাফি।

  • খেলায় নিয়ম মানতে কষ্ট।

  • খুব তাড়াতাড়ি রেগে যাওয়া বা হতাশ হওয়া।

কেন কিছু শিশু অতি সক্রিয় হয়

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি কোনো কোনো শিশুর স্বভাব। তাদের অতিরিক্ত এনার্জির স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা দেয়। এটি বয়স অনুযায়ী স্বাভাবিক আচরণ। তবে কখনো কখনো অতি চঞ্চলতা এডিএইচডির লক্ষণ হতে পারে। এই আচরণ দীর্ঘদিন ধরে চলছে কি না ও দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা করছে কি না—এটাই গুরুত্বপূর্ণ।

জেনেটিক অর্থাৎ বংশগতির কারণে শিশু এমন হতে পারে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের কিছু অংশ একটু ভিন্নভাবে কাজ করা, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, বেশি চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া, চাপ, ভয়, দুশ্চিন্তা, খুব ছোট বয়সে অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের কারণে এমনটা হতে পারে।

অভিভাবকদের করণীয়

প্রতিদিন ঘুম, খাবার, পড়া, খেলা একই সময়ে করানোর চেষ্টা করুন। রুটিনে শিশুর মনে নিরাপত্তা জন্মায় ও আচরণ স্থির হয়। দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে দেবেন না। খোলা জায়গায় দৌড়ানো, সাইকেল, ফুটবল, সাঁতার ইত্যাদি করান। ‘পুরো হোমওয়ার্ক শেষ করো’ নয়; বরং বলুন ‘প্রথম তিন লাইন করো, তারপর বিরতি’। ছোট ছোট সাফল্যেও প্রশংসা করুন। এতে ভালো আচরণ আরও বাড়ে। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমায় কি না, নিশ্চিত করুন। বেশি চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার দেবেন না। প্রচুর পানি ও ফল-সবজি খাওয়ান। হালকা খাবার দিন। বাসায় খুব বেশি শব্দ, টিভি বা অন্যদের ঝগড়া শিশুর অস্থিরতা বাড়ায়। এসব করা যাবে না। যদি শিশুর আচরণ পড়াশোনা, বন্ধুত্ব বা পরিবারে সমস্যা তৈরি করে, তবে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নিন।

মনে রাখবেন, অতি সক্রিয় শিশু মানে সমস্যা নয়; বরং তারা সৃজনশীল, কৌতূহলী, প্রাণবন্ত ও দ্রুত শেখে। আপনার ধৈর্য, বোঝাপড়া ও ভালোবাসা তার ভবিষ্যতের শক্তি।

  • ডা. ফাতেমা তুজ জোহরা, রেজিস্ট্রার, শিশু বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা