
হাত–পা ঝিনঝিন করা বা অস্বাভাবিক অনুভূত হওয়া খুবই অস্বস্তিকর। অনেকে বলেন, পিন দিয়ে খোঁচানোর মতো অনুভূতি হয়, কারও পায়ের তালু জ্বলে, পা কামড়ায়, অবশ হয়ে আসে, ব্যথা করে ও রাতে ঘুম হয় না। কেন এমন হয়? এই সমস্যায় অনেকেই ভুগছেন।
চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় এই সমস্যাকে ‘পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি’ বলে। এর অর্থ হাত–পায়ের দূরবর্তী স্নায়ুগুলোর সমস্যা। হাতের চেয়ে পায়ে এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। আরও বেশি হয় পায়ের তলায়। সমস্যা বেশি হলে অনেক সময় পায়ের অনুভূতি কমে যায়। পা থেকে স্যান্ডেল খুলে গেলেও রোগী টের পান না। খসখসে একটা অনুভূতি হয়।
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি অনেক কারণেই হতে পারে। তবে নিম্নোক্ত কারণগুলো অন্যতম—
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
কিডনির রোগ
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভিটামিনের অভাব
হাত-পা ঝিনঝিন করা, খোঁচানো, জ্বালা করা। হাত-পা অবশ হয়ে আসা। হাত-পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়া। ব্যথা করা। হাত-পায়ের শক্তি কমে যাওয়া।
পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি রোগনির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস শুনতে হবে এবং ভালো করে রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোন ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ‘নার্ভ কন্ডাকশন’ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
প্রথমেই খেয়াল করতে হবে রোগী এমন কোনো ওষুধ সেবন করছেন কি না, যার কারণে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হচ্ছে। যদি এ ধরনের কোনো ওষুধ রোগী সেবন করে থাকেন, তাহলে তা বন্ধ করা যায় কি না, সেটা বিবেচনা করতে হবে।
ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে। থাইরয়েডের সমস্যা শনাক্ত হলে তার চিকিৎসা করতে হবে। ভিটামিনের অভাবে নিউরোপ্যাথি হলে তা পুষ্টিকর খাবার বা ওষুধের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে।
প্রিগাবালিন ও এমিট্রিপটাইলিন জাতীয় ওষুধ হাত-পা ঝিনঝিন কমাতে পারে। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির রোগীদের এ ওষুধগুলো দীর্ঘদিন সেবন করতে হতে পারে।
হাত-পা ঝিনঝিন করার অনুভূতি খুবই অস্বস্তিকর হলেও সঠিক কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসায় তা নিরাময়যোগ্য। প্রয়োজনে নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা. নাজমুল হক, সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা