কর্টিসল বেলি বা হরমোনাল বেলি কী, কেন হয়, কমাবেন কীভাবে

কর্টিসল হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে কর্টিসল বেলি হতে পারে
ছবি: ফ্রিপিক

নিয়মিত শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস মেনে চলার চেষ্টা করেন অনেকেই। তারপরও ভুঁড়িটা বেড়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই কমছে না। তবে কি এটা কর্টিসল বেলি? কী এই কর্টিসল বেলি, কেন হয়, কী করা যেতে পারে?

প্রথমেই বলে নিই, কর্টিসল বেলি বা হরমোনাল বেলি মেডিকেল টার্ম নয়। পেটের চারদিকে চর্বি জমে গেছে, কিন্তু শরীরের অন্য কোথাও উল্লেখ করার মতো চর্বি জমেনি বা ওজন বাড়লেও সব যেন এসে পেটে জমা হয়েছে; হাত, পা ও মুখ আগের মতোই শুকনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে স্ট্রেসে থাকলে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারণে এমন হতে পারে। তাই একে বলে কর্টিসল বেলি। আবার মেটাবলিক সিনড্রোম ও কুশিং সিনড্রোম হলেও শুধু পেটে চর্বি জমে।

কর্টিসল একটি জীবন রক্ষাকারী স্টেরয়েড হরমোন, যা আমাদের অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসরিত হয়। যেকোনো ধরনের স্ট্রেসে এই হরমোনের তৈরি ও নিঃসরণ বেড়ে যায়। কর্টিসল হরমোন বেড়ে গেলে ভিসেরাল ফ্যাট বা পেটের চারদিকে চর্বি জমে বা ভেতরের অঙ্গপ্রতঙ্গে (যেমন লিভার ও অন্ত্র) চর্বি জমে। একই সঙ্গে ক্ষুধা বেড়ে যায় ও উচ্চমাত্রার ক্যালরিযুক্ত খাবারের ক্রেভিং বাড়ে, ইনসুলিনের রেজিস্ট্যান্স বা বাধা দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই মেটাবলিক সিনড্রোম, ডায়াবেটিস ও কুশিং সিনড্রোম থাকলেও কর্টিসল লেভেল বেশি পাওয়া যায় এবং দেখা যায় কর্টিসল বেলি।

মেটাবলিক সিনড্রোম, ডায়াবেটিস ও কুশিং সিনড্রোম থাকলেও কর্টিসল লেভেল বেশি পাওয়া যায় এবং দেখা যায় কর্টিসল বেলি

কী করা যায়

প্রথমেই দেখতে হবে কর্টিসল বেলি কোনো অসুখের কারণে হয়েছে কি না। কুশিং সিনড্রোমে আগে থেকে স্টেরয়েড হরমোন নেওয়ার ইতিহাস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মেটাবলিক সিনড্রোম হলে ওজন কমাতে হবে। কর্টিসল লেভেল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম, যেমন—

  • জীবনকে সহজভাবে দেখতে হবে। চাপ ছাড়া থাকতে হবে। কাজের পাশাপাশি নিজের শখটাকে বা যে কাজ করতে আপনার ভালো লাগে, মনকে চাপমুক্ত করে, এমন কিছু করতে হবে। বাগান করতে পারেন, পছন্দের একটা বই পড়তে পারেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আপনার স্ট্রেস এক ধাক্কায় কমিয়ে দেবে।

  • পর্যাপ্ত ঘুম আপনার কর্টিসল লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখে। রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। ঘুমানোর আগে মুঠোফোনসহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক অনুষঙ্গ দূরে রাখুন। রাত জাগার অভ্যাস থাকলে বাদ দিন। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে ওঠার অভ্যাস করুন।

তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে ওঠার অভ্যাস করুন
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করুন। অ্যারোবিক এক্সারসাইজ কর্টিসল লেভেল কমাবে; সঙ্গে কার্ডিও ও রেজিস্ট্যান্ট ট্রেনিং করুন।

  • খাবারে প্রোটিন, আঁশজাতীয় সবজি ও ফলমূল যোগ করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও অ্যালকোহল–জাতীয় খাবার বাদ দিন।

  • মেডিটেশন ও ইয়োগা কর্টিসল লেভেল কমাতে সাহায্য করবে। কিছু করতে না পারলেও খোলা বাতাসে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের অভ্যাস করুন।