অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন
অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন

বাংলাদেশে যেসব ক্যানসার এখন বেশি হয়

বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে জীবনে আধুনিকতা এলেও স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের চর্চা কমে গেছে। জীবনযাপনের পদ্ধতির সঙ্গে বহু ক্যানসারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। আপাতদৃষ্টে সাধারণ নেশাদ্রব্যের সর্বগ্রাসী প্রভাবেও ক্যানসার হয়। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পরিসরে ক্যানসার–বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে অনেকাংশেই ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হয় হেড-নেক ক্যানসার। হেড-নেক ক্যানসার বলতে মাথা, ঘাড়, স্বরতন্ত্রী (ভোকাল কর্ড), শ্বাসনালি, জিব, মুখগহ্বর, খাদ্যনালি এবং এর ওপর দিককার অংশের ক্যানসারকে বোঝানো হয়। পৃথিবীর অন্যান্য অংশে কিন্তু এসব ক্যানসারের হার কম। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের পান, জর্দা, সাদাপাতা, গুল প্রভৃতি গ্রহণের অভ্যাসের কারণেই এ অঞ্চলে এসব ক্যানসারের হার অনেক বেশি।

বাংলাদেশে পুরুষদের যেসব ক্যানসার বেশি হয়, সেগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার। নারীরাও এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন, তবে তুলনামূলক কম। একটা সময় ছিল, যখন তরুণেরা ধূমপান করলেও অভ্যাসটিকে মুরব্বিদের থেকে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করতেন। অর্থাৎ, ধূমপান করলেও সামাজিক কারণেই ধূমপানের মাত্রা থাকত সীমিত। তবে এখন উঠতি বয়সী অনেক ছেলে এবং মেয়ে দেদার ধূমপান করছেন। অথচ ধূমপানের কারণে একজন ধূমপায়ী নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি তাঁর সিগারেটের ধোঁয়ায় অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। জনসমক্ষে ধূমপানের বিরুদ্ধে দু-একজন নিজ উদ্যোগে প্রতিবাদ করলেও তাতে তেমন লাভ হয় না। গণপরিবহনে চালক থেকে শুরু করে পথচারী—হরহামেশাই এই ধোঁয়ার নেশায় মত্ত থাকছেন। এ বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা না হলে ভবিষ্যতে ফুসফুসের ক্যানসারের হার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রতি ১০০ জন নারীর ৯ জনই স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে থাকেন। খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন, সন্তান ধারণে খুব বেশি দেরি করা এবং সন্তানকে স্তন্যদান না করার মতো কিছু বিষয় এই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘদিন ধরে ইস্ট্রোজেন হরমোন গ্রহণ করার কারণেও এই ঝুঁকি বাড়ে। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং খুব জরুরি। অর্থাৎ, আপাতদৃষ্টে সুস্থ একজন নারীরও নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা আবশ্যক। প্রতি মাসে একজন নারী নিজেই এ পরীক্ষা করতে পারেন। চল্লিশ বছর বয়স পেরোনোর পর প্রত্যেক নারীরই প্রতিবছর একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো প্রয়োজন। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে চিকিৎসাপদ্ধতি যেমন সহজ হয়, তেমনি নিরাময়ের সম্ভাবনাও বাড়ে।

বাংলাদেশে জরায়ুমুখের ক্যানসারের হার অবশ্য আগের চেয়ে কমেছে। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকা দেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এ ক্যানসারের হার আরও অনেক কমে যাবে। বিবাহিত নারীদের জন্যও চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে জরায়ুমুখ ক্যানসারের নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।

অনুলিখন: রাফিয়া আলম

অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন, সাবেক পরিচালক ও অধ্যাপক, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা