কোন ভঙ্গিতে ঘুমানো হৃদ্‌রোগীদের জন্য নিরাপদ

শরীর ও মনের ক্লান্তি কাটাতে রাতে ভালো ঘুম খুবই জরুরি। শক্তি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ঘুম, ভালো রাখে হরমোনের ভারসাম্য এবং হৃদ্‌যন্ত্রের স্বাস্থ্য। মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, মানসিক চাপ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে ঘুম।

২০১৮ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণায় বলা হয়, হৃদ্‌রোগের সঙ্গে ঘুমের গভীর সম্পর্ক আছে। স্বল্প ঘুম ও অনিদ্রা হৃদ্‌রোগ বাড়ায়। এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। তাই হৃদ্‌রোগীদের জন্য ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নিই, কীভাবে ঘুমালে হৃদ্‌যন্ত্র ভালো থাকবে।

বাঁ কাতে ঘুমানো

হৃদ্‌রোগীদের জন্য ঘুম খুব গুরুত্বপূর্ণ। মডেল: জুলহাজ্জ জুবায়ের

বাঁ পাশ হয়ে ঘুমালে অ্যাসিড রিফ্লেক্স কম হয়। যেহেতু গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লেক্স ডিজিজের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের উচ্চ ঝুঁকির একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাই অ্যাসিডিটি কমানো হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ডান কাতে ঘুমানো

হৃদ্‌রোগীদের জন্য ডান দিকে ঘুমানো অনেক বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ।

ডান দিক হয়ে ঘুমানো হৃদ্‌রোগীদের জন্য ভালো। কারণ, এভাবে হৃদ্‌যন্ত্র স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। এতে ইসিজিতে পরিবর্তন হয় খুব কম। হেলথলাইনের মতে, হার্ট ফেইলিওর রোগীদের জন্য এভাবে শোয়া সবচেয়ে উপকারী। যদিও কেউ কেউ মনে করেন, ডান পাশ হয়ে ঘুমালে হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি হয়। তবে এ ধারণার পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। এ ছাড়া হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণযন্ত্র আইসিডি (ইমপ্ল্যাটেবল কার্ডিওভার্টার) বসানো হৃদ্‌রোগীদের জন্য ডান দিকে ঘুমানো অনেক বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ। কারণ, আইসিডি সাধারণত বাঁ পাশে বসানো হয়।

চিৎ হয়ে ঘুমানো

চিৎ হয়ে ঘুমানো হৃদ্‌রোগীদের জন্য ক্ষতিকর

হৃদ্‌রোগীদের চিৎ হয়ে না ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, চিৎ হয়ে ঘুমালে স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। স্লিপ অ্যাপনিয়ায় শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যাহত হয় বলে ঘুমের মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, যাঁরা চিৎ হয়ে ঘুমান, তাঁদের মধ্যে স্লিপ অ্যাপনিয়া বেশি। ফলে হৃদ্‌রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

উপুড় হয়ে ঘুমানো

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পেটে ভর দিয়ে ঘুমালে শ্বাস নেওয়ার সমস্যায় ভুগতে পারেন।

যাঁদের হৃদ্‌রোগ আছে, তাঁদের পেটে ভর দিয়ে ঘুমানো একদমই উচিত নয়। এতে শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে ঘাড়ব্যথা, অস্বস্তি ও ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে; যা পরোক্ষভাবে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

পরিশেষে একটি কথা, গবেষণাগুলো থেকে ঘুমের বিভিন্ন অবস্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও হৃদ্‌রোগীদের উচিত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

সূত্র: ওয়েবএমডি