গেঁটেবাতের মতো যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা তখনই দেখা দেয়, যখন ইউরিক অ্যাসিড গাঁট বা অস্থিসন্ধিতে বাসা বাঁধে
গেঁটেবাতের মতো যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা তখনই দেখা দেয়, যখন ইউরিক অ্যাসিড গাঁট বা অস্থিসন্ধিতে বাসা বাঁধে

প্রাকৃতিকভাবে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে মেনে চলুন ৮টি উপায়

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে গেঁটেবাতের মতো যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা তখনই দেখা দেয়, যখন ইউরিক অ্যাসিড গাঁট বা অস্থিসন্ধি বাসা বাঁধে। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে প্রাকৃতিকভাবেই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

১. ইউরিক অ্যাসিড বাড়ায় এমন খাবার কমান

পিউরিন এমন এক যৌগ, যা আমাদের শরীরে বর্জ্য পদার্থ হিসেবে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। ফলে যেসব খাবারে পিউরিন বেশি থাকে, সেসব হজমের পর ইউরিক অ্যাসিডে রূপ নেয়। তাই এসব খাবার সীমিত খাওয়াই ভালো। লাল মাংস, লিভার বা অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, মাছ, শামুকজাত খাবার ও পোলট্রিতে পিউরিন বেশি থাকে।

তবে সব ধরনের পিউরিন খারাপ নয়। সবজিতে থাকা পিউরিন আবার ইউরিক অ্যাসিড তেমন বাড়ায় না। তাই সবজি খেলে সমস্যা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারসাম্য। এসব খাবার একদম বাদ না দিয়ে পরিমাণে কমান।

২. অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন

চিনি, বিশেষ করে ফ্রুকটোজ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা সংযোজিত চিনি ও হাই ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কোমল পানীয় বা সোডার বদলে পানি, চিনি ছাড়া কফি বা চা খান।

৩. পর্যাপ্ত পানি খান

কিডনি আমাদের শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিডের বেশির ভাগটাই বের করে দেয়। তাই পানি কম খেলে ইউরিক অ্যাসিড শরীরে জমে যেতে পারে। দিনে পর্যাপ্ত পানি খান। এক জায়গায় বসে কাজ করলে কাছেই একটি পানির বোতল রাখুন এবং নিয়ম করে খানিক পরপর পানি খান।

৪. কফি উপকারী হতে পারে

গবেষণা বলছে, নিয়মিত কফি খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমতে সহায়ক হতে পারে। তবে কফিতে যেন চিনি না থাকে বা থাকলে সামান্য। মনে রাখবেন, কফি মোটেও ওষুধ নয়, এ ক্ষেত্রে এটি কেবল একটি উপকারী পানীয়।

৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

অতিরিক্ত ওজন বা চর্বি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে, আবার কিডনির কার্যক্ষমতাও কমায়। প্রতিদিন হাঁটা বা সাইকেল চালানোর মতো হালকা ব্যায়াম করুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

৬. রক্তে শর্করা ঠিক রাখুন

যাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। খাবার ও জীবনযাপনের ধরন এমন রাখুন, যাতে রক্তে শর্করা হঠাৎ ওঠানামা না করে।

৭. ফাইবার ও ভিটামিন সি বাড়ান

ফাইবার শরীরে ইউরিক অ্যাসিড শোষণ ও নির্গমনের প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। ফাইবারসমৃদ্ধ ফলমূল ও শাকসবজি প্রতিদিনের খাবারে রাখুন। লেবু, কমলা, পেয়ারা, টমেটোর মতো ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ খাবার ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সহায়ক।

৮. ওষুধ বা সাপ্লিমেন্টের বিষয়ে সতর্ক থাকুন

কিছু ওষুধ ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দিতে পারে, যেমন নির্দিষ্ট রক্তচাপের ওষুধ বা ডাই–ইউরেটিক (মূত্রবর্ধক) ওষুধ। আপনি যেসব ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছেন, সেসব নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

শেষ কথা

সুস্থ জীবনযাপনের অভ্যাসই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি। নিয়মিত পানি খাওয়া, পরিমিত খাবার, ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম—এই চারটি বিষয় মানতে পারলে ইউরিক অ্যাসিড সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

তবে মনে রাখবেন, এই পরামর্শ সাধারণ তথ্য হিসেবে দেওয়া হয়েছে। কোনো নতুন খাদ্যাভ্যাস বা ওষুধ পরিবর্তনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সূত্র: হেলথলাইন