শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি
শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি

জ্বরের সময় লিম্ফ নোড ফুলে গেছে? তাহলে এসব লক্ষণ অবহেলা করবেন না

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি। শরীরে সংক্রমণ হলে এই লিম্ফ নোডগুলো সক্রিয় হয়ে উঠে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। অনেক সময় বেশি কাজ করার জন্য সেগুলো ফুলে যায়। সাধারণত গলায়, কানে, বগলে কিংবা কুঁচকিতে এসব ফোলা লিম্ফ নোড চোখে পড়ে।
অনেক সময় দেখা যায়, কারও শরীরে জ্বর দেখা দেওয়ার পাশাপাশি এক বা একাধিক জায়গার লিম্ফ নোড ফুলে গেছে। এটি কখনো সাধারণ ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হতে পারে, আবার কখনো এটি হতে পারে গুরুতর কোনো অসুস্থতার ইঙ্গিত।
সম্ভাব্য কারণগুলো হলো—

ভাইরাল সংক্রমণ

  • সাধারণ সর্দি-জ্বর

  • ইনফ্লুয়েঞ্জা

  • এপস্টেইন-বার ভাইরাস বা মোনোনিউক্লিওসিস

  • চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু

ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ

  • টনসিলাইটিস

  • দাঁতের সংক্রমণ

  • যক্ষ্মা

  • ত্বকে সংক্রমণ

অন্যান্য কারণ

  • অটোইমিউন ডিজিজ: যেমন লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস

  • ম্যালিগন্যান্সি বা ক্যানসার: লিম্ফোমা, লিউকোমিয়া

  • ওষুধের প্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের কারণেও ফুলে যেতে পারে লিম্ফ নোড

  • প্যারাসাইটিক বা ফাঙ্গাল ইনফেকশন

লিম্ফ নোড ফোলা মানেই যে বড় কোনো রোগ হয়েছে, তা নয়

যেসব লক্ষণে অবহেলা করা যাবে না

লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার পাশাপাশি আরও কিছু সতর্কতামূলক উপসর্গ আছে, যেগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

  • ফোলা নোডটি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে একই রকম হয়ে আছে বা বাড়ছে

  • ফোলা জায়গায় ব্যথা, লালচে ভাব বা গরম লাগা

  • একাধিক স্থানে নোড ফোলা

  • ওজন কমে যাওয়া, অরুচি, রাতে অতিরিক্ত ঘাম

  • শিশুদের ক্ষেত্রে বারবার সংক্রমণ বা দুর্বলতা

চিকিৎসা

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি প্রয়োজন বুঝে পরীক্ষা দেবেন।
মূল রোগের ওপর নির্ভর করে এ সমস্যার চিকিৎসা। যদি সাধারণ ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হয়, তবে সাধারণত বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি পান ও জ্বর কমানোর ওষুধই যথেষ্ট। তবে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। যক্ষ্মা বা ক্যানসারের ক্ষেত্রে দরকার হয় বিশেষায়িত চিকিৎসা।
নিজ থেকে ওষুধ খাওয়া, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়া বিপজ্জনক। ভুল চিকিৎসা সংক্রমণ লুকিয়ে রাখতে পারে বা রোগ জটিল করে তুলতে পারে।

সতর্কতার জন্য করণীয়

  • ফোলা স্থানে হাত না দেওয়া বা চাপ না দেওয়া

  • নিজের অনুমানে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা

  • শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা

  • নিয়মিত পর্যবেক্ষণ রাখা, প্রয়োজনে ফলোআপ।
    লিম্ফ নোড ফোলা মানেই যে বড় কোনো রোগ হয়েছে, তা নয়। তবে এটা কোনো গুরুত্বহীন উপসর্গও নয়। বিশেষ করে জ্বরের সঙ্গে এটি দেখা গেলে অবশ্যই সচেতন হওয়া দরকার। সময়মতো রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা জীবন রক্ষা করতে পারে।