উচ্চতার তুলনায় আমি অনেকটাই চিকন, কী করি?

ডায়েট, ব্যায়াম ও ওজন কমানো–বাড়ানো নিয়ে পাঠকদের নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান শামছুন্নাহার নাহিদ

শামছুন্নাহার নাহিদ
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন

আমি ১৮ বছর বয়সী একজন ছেলে। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। ওজন ৫৪ কেজি। উচ্চতার তুলনায় আমি অনেকটাই চিকন। আমার বুকের হাড়, পাঁজরের হাড়, ক্ল্যাভিকল ও কাঁধের হাড় স্পষ্ট দেখা যায়। মানুষজন এটা নিয়ে মজা করে, যা মানসিকভাবে আমাকে কষ্ট দেয়। আমি চাই দ্রুত ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওজন বাড়াতে। তাই পুষ্টি বা চিকিৎসাগত পরামর্শ চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর

১৮ বছরে আপনার যে উচ্চতা, তাতে সাধারণত বিএমআই ১৮ দশমিক ৫–এ থাকা প্রয়োজন, সেখানে আপনার ওজন ১০ কেজি কম আছে। একজন মানুষের ওজন কম থাকে বেশ কয়েকটি কারণে। এর মধ্যে আছে-

  • পরিমাণে কম খাওয়া। দীর্ঘদিন ধরে শরীরের চাহিদার তুলনায় কম খেতে থাকলে ওজন একই জায়গায় থেকে যায় বা কমতে থাকে।

  • কেউ যদি শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন, তাঁর শরীরের এনার্জি খরচ হয় বেশি। যে কারণে শরীরের ওজন কমতে থাকে।

  • কারও পেটের সমস্যা, আইবিএস (পাকস্থলী ও অন্ত্রের সমস্যা), হজমে সমস্যা, ঘন ঘন ডায়রিয়া, খাওয়ার পর বমি হতে থাকলে ওজন কমতে থাকে।

  • যাঁরা খাবার খুব বেছে খান, তাঁদের ওজন কম থাকে। অর্থাৎ এটা খাব না, ওটা খাই না করতে করতে তাঁদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের অভাব দেখা দিতে থাকে। পাশাপাশি ওজনও কমতে থাকে।

  • টাইপ-১ ডায়াবেটিস, হাইপার থাইরয়েডিজম, ক্রনিক ডায়রিয়া, আমাশা ইত্যাদি রোগে ওজন কমার আশঙ্কা বেশি।

  • আর্থিক অসচ্ছলতা, খাবার খাওয়ার সময়ের অভাব (সাধারণত শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের হয়ে থাকে) একটা বড় কারণ।

  • থাকা-খাওয়ার চেনা পরিবেশ পাল্টে গেলেও অনেকের খাবারে অরুচি হয়। এরপর না খেতে খেতে ওজন কমে যায়। যেমন কেউ যখন অন্য শহরে/হোস্টেল/হলে/মেসে থাকতে শুরু করেন, তখন রান্না ও খাবারের ধরনের পরিবর্তনের জন্য খেতে অসুবিধা হতে পারে।

এ রকম আরও কিছু কারণ আছে, যে কারণে একজন মানুষের ওজন কম থাকতে পারে। তাই ওজন বাড়াতে হলে আপনার নির্দিষ্ট কারণটা আগে খুঁজে বের করতে হবে। ওপরের কোনোটা আপনার সঙ্গে মিলে গেলে সেইমতো ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি ওজন বাড়াতে যেসব বিষয় মেনে চলা জরুরি-

১.খাবারের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে।

২. ক্যালরিবহুল খাবার, যেমন খিচুড়ি, পোলাও, ফ্রাইড রাইস, ঘরে তৈরি ভাজা-ভুনা ইত্যাদি খেতে হবে।

৩. রান্নায় তেলের পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন।

৪. পছন্দসই খাবার এবং নিজের পছন্দমতো রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

৫. যদি মনে হয় খিদে কম, তবে শারীরিক পরিশ্রম করুন, খাওয়ার আগ্রহ বাড়বে।

৬. দীর্ঘ সময় একাধারে না খেয়ে থাকবেন না। বিপরীতে বারবার, উচ্চ ক্যালরির খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৭. রাতে পর্যাপ্ত ( সাত-আট ঘণ্টা) ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এতে ক্ষুধা পাওয়া ও খাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হবে।

৮. যদি কোনো নির্দিষ্ট খাবারে অসুবিধা থাকে, তবে তার সমান গুণসম্পন্ন অন্য খাবার খেতে হবে। যেমন সরাসরি তরল দুধ খেলে যদি হজমে সমস্যা হয়, তবে দুধের ছানা, দই, ল্যাকটোজ ফ্রি মিল্ক, দুধজাতীয় অন্য কোনো খাবার খেতে হবে।

৯. শারীরিক কোনো সমস্যা (যেসব রোগ বা সমস্যার কথা উপরে উল্লেখ করেছি) থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।

১০. যদি কোনো পুষ্টির ঘাটতি থাকে, তবে পুষ্টিচাহিদা অনুযায়ী তা পূরণে আপনাকে সাপ্লিমেন্ট নিতে হতে পারে। যেমন রক্তাল্পতা থাকলে আয়রন ক্যাপসুল।

মনে রাখবেন, দ্রুত ওজন বাড়ানো সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে শরীরের ওজন স্বাভাবিকে আসবে, তার জন্য ধৈর্য ও চেষ্টা রাখতে হবে। পুষ্টি–বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো একটা ডায়েট চার্ট তৈরি করে নিলে এই যাত্রা আপনার জন্য সহজ হবে।