ওসিডি সব সময় চোখে পড়ার মতো নয়, অনেক সময় শিশুরা লজ্জায় বা ভয়ে বলে না কী হচ্ছে তাদের ভেতরে।
ওসিডি সব সময় চোখে পড়ার মতো নয়, অনেক সময় শিশুরা লজ্জায় বা ভয়ে বলে না কী হচ্ছে তাদের ভেতরে।

শিশুদেরও হতে পারে ওসিডি

শিশুদেরও ওসিডি বা অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার হয়। শিশুরা ছোট, সবকিছু বুঝে ফেলার মতো বয়স ও ভাষা এখনো তাদের হয়নি। কিন্তু মনে মনে হয়তো প্রতিদিনই এ নিয়ে লড়াই করছে। বারবার হাত ধোয়া, কিছু একটা ঠিক না থাকলেই কান্না জুড়ে দেওয়া, কিংবা অস্বস্তিকর চিন্তা থেকে নিজেকে বাঁচাতে একই কাজ বারবার করা—এসব আচরণ হতে পারে ওসিডির উপসর্গ।

ওসিডি এমন এক মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণগত সমস্যা, যা শিশুর মনে অবাঞ্ছিত চিন্তার ঢেউ তোলে। সেই চিন্তা থেকে রক্ষা পেতে শিশু নির্দিষ্ট কিছু আচরণ করতে বাধ্য হয়। সে বুঝে উঠতে পারে না, কীভাবে এর থেকে মুক্তি পাবে।

শিশুর ওসিডি কীভাবে বুঝবেন

ওসিডি সব সময় চোখে পড়ার মতো নয়। অনেক সময় শিশুরা লজ্জায় বা ভয়ে বলে না কী হচ্ছে তাদের ভেতরে। এ ক্ষেত্রে শিশুদের আচরণগত কিছু বিষয় আপনাকে খেয়াল করতে হবে।

  • জীবাণু বা ‘খারাপ কিছু’ নিয়ে অতিরিক্ত ভয়।

  • বারবার হাত ধোয়া, দরজা চেক করা, কিংবা সবকিছু গুছিয়ে রাখার চাপ।

  • কিছু না করলে খারাপ কিছু হবে—এমন ভয়।

  • ভুল হলে নিজেকে খুব দোষারোপ করা।

  • রুটিন ভেঙে গেলেই কান্না বা রাগ।

  • খেলনা এদিক–ওদিক হলেই রাগারাগি।

  • সবকিছু ‘একদম ঠিকঠাক’ না হলে অস্থির হয়ে যাওয়া।

শিশুর এমন আচরণকে অনেক সময়ই অকারণে জেদ ভেবে ভুল করা হয়। কিন্তু আসলে এগুলো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরের কিছু।

মা–বাবা ও অভিভাবকদের করণীয়

সন্তানের আচরণে এসব বিষয় খেয়াল করলে তাকে দোষারোপ করবেন না। এটা কিন্তু শিশুটির দোষ নয়। এটা ওর চাওয়াও নয়। সে বাধ্য হয়েই এমনটা করে থাকে। ওসিডি নিয়ে জানুন ও বোঝার চেষ্টা করুন। জানলে ভয়টা কমে যায়। পাশাপাশি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও হয় সহজ। বারবার কমপালসন বা আবদার মেনে নেবেন না। ভালোবাসার সঙ্গে ধীরে ধীরে তাকে গাইড করার চেষ্টা করুন। তাকে কথা বলার সুযোগ দিন। ‘তুমি যা করছ, সেটা নিয়ে কথা বলা উচিত এবং কথা বলা ঠিক আছে’ এই ভরসা দিন। চিকিৎসকের সহায়তা নিন। সঠিক থেরাপি, বিশেষ করে সিবিটি ও ইআরপি অনেক ভালো ফল দেয়।

ওসিডি থেকে রেহাই পাওয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু এর জন্য চাই সময়মতো সমস্যাগুলো বুঝতে পারা, এর জন্য সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভালোবাসা দিয়ে শিশুর পাশে থাকতে হবে। অভিভাবকের আন্তরিকতা ও ধৈর্য শিশুর জন্য লড়াইটা সহজ করতে সাহায্য করে।

ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ, সহকারী অধ্যাপক ও শিশু মনোরোগবিশেষজ্ঞ