ভালো থাকুন

উদ্ভিজ্জ প্রোটিন পাবেন কীভাবে

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দেশের জনগণের একটা বড় অংশ এসব খাবার কিনতে পারছেন না। ফলে তাঁদের দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। অনেকে নিরামিষভোজী অর্থাৎ মাছ–মাংস তেমন খান না। এ অবস্থায় প্রোটিনের চাহিদা পূরণে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে।

দৈনিক কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন, তা নির্ভর করে ওজনের ওপর। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ থেকে ১ গ্রাম প্রোটিনের দরকার হয়, অর্থাৎ কারও ওজন যদি ৭৫ কেজি হয়, তাহলে তাঁকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭৫ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে।

মাছ–মাংসের শ্রেণিভেদে প্রতি ১০০ গ্রাম মাছ বা মাংস থেকে ১৯ থেকে ২৫ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন পাওয়া যায়। একটি মাঝারি আকারের ডিম থেকে আকারভেদে পাওয়া যায় ৬ থেকে ৮ গ্রাম প্রোটিন। প্রতি ১০০ মিলিলিটার দুধ থেকে ৪ থেকে ৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রাণিজ প্রোটিনে সব ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড পাওয়া যায়।

উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস কী

মাছ, মাংস, ডিম, দুধ এসব প্রথম শ্রেণির প্রোটিনের পরিবর্তে আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন খেয়েও প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারি।

সব ধরনের ডাল, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, সয়াবিন, বাদাম, মটরশুঁটি, বরবটি, রজমা ও স্পিরুলিনা প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। ডালে ১৮ থেকে ২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে। যেমন ছোলায় প্রায় ১৮ শতাংশ, মটরের ডালে ২২, মসুর ডালে ২৩ ও মুগডালে ২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে। প্রকারভেদে সব ধরনের বাদামেও ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে।

উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায় সয়াবিন থেকে। প্রায় ৩০ শতাংশ প্রোটিন থাকে এখানে। সয়াবিন থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনের গুণগত মান অন্যান্য উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চেয়ে উন্নত। সয়াবিন থেকে বিভিন্ন প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার তৈরি হয়। সয়ামিল্ক, সয়ামিট, সয়াদই, সয়াপনির অন্যতম। সয়াদুধ ল্যাকটোজ ফ্রি, তাই যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স অর্থাৎ দুধ বা দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা হয়, তাঁরা সয়াদুধ খেতে পারেন। এখানে দুধের সমপরিমাণ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টিগুণ বিদ্যমান।

প্রোটিনের উৎস হিসেবে স্পিরুলিনা বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি একধরনের সামুদ্রিক শৈবাল। প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর এই শৈবাল।

সেকেন্ড ক্লাস বা দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিনে প্রয়োজনীয় এমাইনো অ্যাসিডের ঘাটতি থাকে, সেটা পূরণ করতে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে রান্না করা যায়। যেমন ডালে লাইসিন নামক প্রয়োজনীয় এমাইনো অ্যাসিড থাকে না, কিন্তু চালে লাইসিন বেশি থাকে। যদি চাল আর ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করা যায়, তাহলে তা থেকে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন পাওয়া যাবে। সঙ্গে একটু সবজি যোগ করলে প্রোটিনসমৃদ্ধ ‘ব্যালান্স ডায়েট’ হয়ে যাবে।

প্রথম শ্রেণির প্রোটিন যেমন মাংস বেশি খেলে রক্তের কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিনে ঝুঁকি কম। সে হিসেবে প্রাণিজ প্রোটিনের চেয়ে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন স্বাস্থ্যবান্ধব। তবে যাঁরা মূলত উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে প্রোটিন নিতে চান, তাঁরা রোজকার খাদ্যতালিকা এমনভাবে সাজাবেন, যেন আমিষের ঘাটতি না হয়।


মো. ইকবাল হোসেন, সিনিয়র পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল