
নভেম্বর ডায়াবেটিস সচেতনতা মাস। এ উপলক্ষে কংগ্রেসিয়া ও প্রথম আলোর আয়োজনে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আয়োজিত এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দেশের কয়েকজন স্বনামধন্য চিকিৎসক। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘ডায়াবেটিস আমার, দায়িত্বও আমার’। সহযোগিতায় ছিল হেলদি লিভিং ট্রাস্ট। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. তানজিনা হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের হযোগী অধ্যাপক, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সভাপতি ও ডায়াবেটিস মেলার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডা. শাহজাদা সেলিম। তাঁর বক্তব্যটি এখানে তুলে ধরা হলো।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যার সঙ্গে অন্য অনেক রোগ জড়িত। রোগীর জীবনযাপন পদ্ধতি রোগটি হতে সাহায্য করেছে। এই রোগের চিকিৎসা করতে গেলে জীবনযাপন পদ্ধতিতে আগে পরিবর্তন আনতে হবে।
যে কারণে যাঁর ডায়াবেটিস হয়েছে তাঁর চিকিৎসা করতে গেলে ওটারই সংশোধন করতে হবে। আমি যদি সুনির্দিষ্টভাবে বলি বাংলাদেশের মানুষের ডায়াবেটিস হওয়ার পেছনে যদি ১ নম্বর কারণ আমাদের ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস।
আমরা প্রচুর কার্বোহাইড্রেট–জাতীয় খাবার খাই। পৃথিবীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট আমরা প্রতিদিন খাচ্ছি। দ্বিতীয় ঝুঁকি হলো আমরা একবারে প্রচুর খেতে পছন্দ করি। একটা সময় এত খেয়ে ফেলি যে খাবার খাওয়ার পর ঝিমাতে বাধ্য হই।
আমাদের যত অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণ, ঈদ, বিয়েশাদি থেকে শুরু করে শোকের অনুষ্ঠানগুলোয়ও শুধু শর্করা ও মিষ্টির ছড়াছড়ি। আমাদের দৈহিক কাঠামো ছোট, অর্থাৎ আমাদের প্যানক্রিয়াসের কাঠামো ছোট এবং ইনসুলিন তৈরি করার সামর্থ্যও কম।
সেই আমরাই সবচেয়ে বেশি শর্করা খাচ্ছি এবং বিনিময়ে রক্তে গ্লুকোজ বেড়েই চলেছে। আমাদের একবারে বেশি খাওয়া কমাতে হবে, শর্করা খাওয়া কমাতে হবে। আমিষ খাওয়াটা বাড়াতে হবে, শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া বাড়াতে হবে। আমরা অনেক সময় আলুকে শাকসবজি মনে করি। আলু কিন্তু ভাতের চেয়েও শক্তিশালী শর্করা।
বাংলাদেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগী বেশি। তাঁদের মধ্যে দৈহিক স্থূলতার আশঙ্কা বেশি। সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি হবে খাদ্যব্যবস্থা থেকে। আমাদের আর্থিক উন্নতি হচ্ছে, যান্ত্রিক সুবিধা বাড়ছে এবং আমরা শারীরিক শ্রম সম্পাদন করতে ভুলে যাচ্ছি।
পারিবারিক, সামাজিক অথবা ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তাহীনতার কারণে খেলাধুলা ও হাঁটাহাঁটি কমে গেছে। শারীরিক সামর্থ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটুকু ওজন কমাতে হবে এবং প্রাত্যহিক কার্যক্রম কেমন হবে—সবকিছু বিবেচনা করে একটা শারীরিক শ্রমের কাঠামো দাঁড় করাতে হবে।
আমরা কিন্তু নতুন আরেকটি ঝুঁকিতে প্রবেশ করেছি। করোনা আমাদের এই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সে সময় আমরা সবাইকে ঘরে থাকতে উৎসাহিত করেছিলাম কিন্তু এখন মানুষ আর ঘর থেকে বের হচ্ছে না। অনলাইনে অতিরিক্ত সময় কাটানোর জন্য আমাদের ঘুমের পরিমাণ কমে গেছে।
একজন সুস্থ–স্বাভাবিক মানুষের জন্য ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা রাতের ঘুম জরুরি। দিনের ঘুমকে রাতের ঘুমের বিকল্প হিসেবে ধরা যাবে না। সঠিকভাবে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ছয়বার হলে খুব ভালো হয়। পাঁচবারের নিচে নয়। একবারে প্রচুর খাবার খাবেন না। শর্করা কমিয়ে আমিষ বাড়াতে হবে। খাদ্যতালিকা, শারীরিক শ্রম এবং নিদ্রা ঠিক রাখতে হবে। চাপমুক্ত জীবনযাপন করতে হবে। চাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় জানতে হবে।