‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ পদ্ধতিতে ১০ কেজির বেশি ওজন কমিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। একই পদ্ধতিতে ওজন কমিয়েছেন অভিনেত্রী সারা আলী খানও। চলতি বছরের শুরুতে এ তথ্য প্রকাশ্যে আনেন ভারতের তারকাখ্যাত এক পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসক সিদ্ধান্ত ভার্গব।

এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে দ্রুত ওজন কমে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এভাবে ওজন কমানো আসলে কতটা স্বাস্থ্যকর, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াই বা কী? সবাই কি এই ডায়েট করতে পারবেন? সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে কথা বলেছেন পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ পাল মানিক্কাম। বিষয়টি স্পষ্ট করার পাশাপাশি এ নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণাও ভেঙে দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন এই চিকিৎসক।
এ কৌশলের মূল আবহ হচ্ছে, না খেয়ে থাকা। এ পদ্ধতিতে দিনের অনেকটা সময় একটানা না খেয়ে থাকতে হয়। কয়েকভাবে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা যায়। তবে সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিটি হচ্ছে, দিনের ২৪ ঘণ্টাকে দুই ভাগে ভাগ করে এক অংশে খাবার খেয়ে বাকি সময় সম্পূর্ণ না খেয়ে থাকা। এটিকে ১৬: ৮ কৌশলও বলা হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে যা খাওয়ার খেয়ে নিয়ে বাকি ১৬ ঘণ্টা উপোস থাকা। চিকিৎসক পালের মতে, এ ধরনের খাদ্যাভ্যাস শরীরের হজমপ্রক্রিয়াকে বিশ্রাম নিতে সাহায্য করে, পুনর্গঠন এবং মেরামত হতে সময় দেয়। ফলে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
চিকিৎসক পাল বলেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে শরীরে ইনসুলিন হরমোনের চাপ কমে যায়। ইনসুলিন মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা ও চর্বি সঞ্চয় নিয়ন্ত্রণ করে। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, তখন শরীরে জমে থাকা চর্বি ক্ষয় হতে শুরু করে। সারা দিন বিভিন্ন খাবার খাওয়ার পর ইনসুলিনের বিশ্রাম প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া সূর্যাস্তের পর খাবার খেলে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এতে বেশি ক্লান্ত লাগে। শরীর যথাযথ শক্তি সঞ্চয় করতে ব্যর্থ হয়।
এ পদ্ধতির ডায়েটে না খেয়ে থেকে খিদে সহ্য করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। এ ব্যাপারে পাল বলেন, অনেক সময় আমরা তৃষ্ণার অনুভূতিকে ভুল করে খিদে মনে করি। প্রতিদিন অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করলে পিপাসা মিটে যাবে, আর খিদের অনুভূতিও কমাতে সাহায্য করবে।
চিকিৎসক পাল মানিক্কাম জানান, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সবার জন্য উপযুক্ত নয়। নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক সমস্যা, বিশেষ করে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিয়ে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে শুরুতে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। কারণ, শরীরকে নতুন খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। উপবাসের সময়ও পাকস্থলী অ্যাসিড তৈরি করতে থাকে, ফলে সাময়িকভাবে বুক জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শরীরকে সময় দিতে হবে। তাই পালের পরামর্শ হচ্ছে, শুরুতেই ১৬: ৮ ঘণ্টার সম্পূর্ণ ফাস্টিং শুরু না করে, ধীরে ধীরে করা উচিত। পাল বলেন, খাওয়ার সময় তিন ধরনের পুষ্টিসমৃদ্ধ ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খেতে হবে। এতে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অপ্রয়োজনীয় নাশতা খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যাবে।
ডায়েট করার সময় শরীরের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি খাবারে প্রোটিন ও ফাইবার থাকা চাই। কারণ, এই দুটি উপাদান পুষ্টিগুণ বজায় রেখে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। চর্বি কমানোর সময় শরীর প্রোটিন ব্যবহার করে পেশি রক্ষা করে, তাই প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত জরুরি। তা ছাড়া ভাত সম্পূর্ণ বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং পুষ্টিবিদের পরামর্শে সঠিকভাবে খাবার মিলিয়ে খেতে হবে, যেন রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে না পায়।
উপবাসের সময় শরীর গ্লাইকোজেন ভেঙে শক্তি তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পানি ক্ষয় হয়। এ সময় পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। পানির অভাবে মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা বা ক্লান্তি অনুভূত হয়। তাই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে ওজন কমার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি তৈরি হয়। হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই অভ্যাস শরীরে প্রদাহ কমায়। ঘুম ভালো হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ইন্টারমিটেন্ট ডায়েট করার সময় কিছু ভুল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক—
১. শুরুতেই ১৬ ঘণ্টা উপবাসে যাবেন না। খাদ্যাভ্যাসের হঠাৎ এই পরিবর্তনে ক্লান্তি ও ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
২. বারবার স্ন্যাকস বা নাশতাজাতীয় খাবার খেলে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এটি না খেয়ে থাকার মূল উদ্দেশ্য নষ্ট করে দেয়।
৩. পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। প্রোটিনের ঘাটতি চর্বি কমানো ও পেশি রক্ষা—দুটোকেই ব্যাহত করে।
৪. পর্যাপ্ত পানি না খেলে পানিশূন্যতা হতে পারে। এতে শরীর অসুস্থ হতে পারে।
৫. বারবার ওজন মাপা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, ওজন কমতে সময় লাগে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে দ্রুত ফলের আশা না করাই ভালো। এটি সাধারণ জীবনযাপনের একটি অংশ হতে পারে। যা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে আয়ত্ত করা ভালো। সূর্যাস্তের পর খাবার বন্ধ করুন। এতে হজম প্রক্রিয়া ভালোভাবে কাজ করবে। রাতে শরীর বিশ্রাম নিতে পারবে।
সূত্র: টাইমস এন্টারটেইনমেন্ট