
অনেকেই ডায়েট করেন। পারলে না খেয়ে থাকেন, তবু ওজন কমে না। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ব্যায়ামের ধরন কিংবা খাওয়ার অভ্যাস। যথাসময়ে স্বাস্থ্যকর খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ওজন কমানোর পুরো বিষয়টা শুধু এটার ওপর নির্ভর করে না। কখনো কখনো শরীরের ভেতরের কিছু সমস্যা বা জীবনযাপনের কিছু দিক বড় ভূমিকা রাখে। সেসবের সমাধান করাও জরুরি। জেনে নিন ওজন না কমার কিছু সাধারণ কারণ এবং করণীয় সম্পর্কে।
১. বেশি খাওয়া: আপনি যে পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করছেন, তার চেয়ে কম খরচ হলে ওজন কমবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা খাবারের হিসাব রাখেন (যেমন ফুড ডায়েরি লেখেন বা ছবি তুলে রাখেন), তাঁরা তুলনামূলক বেশি ওজন কমাতে পারেন। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যদি কারও খাওয়ার অভ্যাস নিয়ে মানসিক চাপ বা খারাপ অভিজ্ঞতা থাকে (যেমন খাওয়াদাওয়া-সম্পর্কিত মানসিক সমস্যা), তাঁদের জন্য ক্যালরির হিসাব রাখা কখনো কখনো ক্ষতিকরও হতে পারে।
২. হিসাব না রাখা: অনেক সময় মনে হয়, কম খাচ্ছি, কিন্তু হিসাব করলে দেখা যায় ঘটনা আদতে উল্টো। আপনার শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে হবে। এ কারণে হিসাব রাখা জরুরি। অনেকেই মাঝেমধ্যে হঠাৎ করে খুব বেশি খেয়ে ফেলেন, যা শরীরের চাহিদার চেয়ে বেশি। যদি সেটা স্বাস্থ্যকর খাবারও হয়, যেমন বাদাম বা ডার্ক চকলেট, তবু অতিরিক্ত খেলে ওজন কমবে না। যদি আপনি নিয়মিতভাবে অতিরিক্ত খান, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এটা বিঞ্জ ইটিং ডিজঅর্ডারের লক্ষণও হতে পারে।
৩. লুকানো ক্যালরি: কোমল পানীয়, সস, মিষ্টি—এসব খাবার থেকেও অনেক ক্যালরি আসে।
১. হরমোন সমস্যা: থাইরয়েড বা পিসিওএসের মতো সমস্যা ওজন কমতে বাধা দেয়।
২. অন্যান্য রোগ: ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা বিষণ্নতার মতো সমস্যার কারণে ওজন কমানো কঠিন হতে পারে।
৩. ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ ওজন বাড়াতে পারে বা কমতে বাধা দেয়।
১. মাংসপেশি বাড়ছে: ব্যায়ামের ফলে যদি পেশি বাড়ে, ওজন একই থাকলেও চেহারায় পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে আপনি যদি নতুন করে ব্যায়াম শুরু করে থাকেন এবং উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খান, তাহলে একই সঙ্গে পেশি বাড়তে এবং চর্বি কমতে পারে। তখন ওজন কমছে না মনে হলেও আদতে শরীরের গঠন ভালো হচ্ছে। ওজন মাপার ওপর নির্ভর না করে মাসে একবার কোমরের মাপ ও শরীরের চর্বির পরিমাণ মাপতে পারেন। এতে আপনি নিজের উন্নতি আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন।
২. চর্বি কমছে, ওজন নয়: ওজন কমছে না দেখে হতাশ হবেন না, হয়তো চর্বি কমছে কিন্তু পেশি বাড়ায় সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
১. খাবারের হিসাব রাখুন: কোন খাবার কত ক্যালরির, সেটা জানুন। মুঠোফোনের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমিষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, আমিষসমৃদ্ধ ডায়েট শুধু ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, বরং হৃদ্রোগের ঝুঁকিও কমায়। আমিষ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে, যা ক্ষুধা কমায়। আমিষভিত্তিক খাবার ওজন আবার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও কমায়। তবে মনে রাখতে হবে, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা সময়ভেদে খাবার ডায়েটে থাকা অতিরিক্ত ওজনের প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে আমিষ সব সময় কার্যকর না–ও হতে পারে।
২. কয়েকবার খাওয়া: অনেকেই ভাবেন, দিনে বারবার অল্প অল্প করে খেলে মেটাবলিজম বাড়ে ও ওজন কমে। কিন্তু এটা একেবারে ঠিক নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার ঘনত্ব ওজন কমানোর ওপর খুব একটা প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ দিনে ৫ থেকে ৬ বার খেলে যে বেশি ওজন কমবে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। তবে হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খেলে উপকার পাওয়া যায়। শর্ত হচ্ছে সারা দিনে ৪ থেকে ৫ বারের বেশি যেন খাওয়া না হয়। অন্যদিকে, একটি কার্যকর ওজন কমানোর পদ্ধতি হলো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। এতে আপনি নির্দিষ্ট সময় ধরে না খেয়ে থাকেন (যেমন ১৫ ঘণ্টা বা তার বেশি সময়), যা শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
৩. কম কার্বের ডায়েট: যদি আপনার ওজন অনেক বেশি হয় বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস কিংবা প্রিডায়াবেটিস থাকে, তাহলে কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ডায়েট আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারে কার্ব কমানো ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে এই প্রভাব বেশি দেখা যায় ডায়েট শুরুর প্রথম ৬ থেকে ১২ মাসে। পরে এর প্রভাব কিছুটা কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, পুষ্টিকর খাবারভিত্তিক লো-ফ্যাট ও লো-কার্ব ডায়েটের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। অর্থাৎ কোনো একটি ডায়েটকে দীর্ঘমেয়াদিভাবে সফল করতে হলে তা এমন হতে হবে, যা আপনি উপভোগ করতে পারেন এবং নিয়মিতভাবে মেনে চলতে পারেন।
সূত্র: হেলথলাইন