
শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়ায় অনেকের দাঁতের সংবেদনশীলতা বাড়ে। এর মধ্যে মাড়ির জটিলতা, মুখের শুষ্কতা ও দাঁতব্যথার মতো বিষয়গুলো রয়েছে। শীতে অনেকে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না, যা মুখের স্বাভাবিক লালা নিঃসরণ কমিয়ে জীবাণুর আক্রমণের পরিবেশ তৈরি করে।
শীতে ঠান্ডা পানি, মিষ্টি বা খাবারের সংস্পর্শে দাঁতব্যথা একটি পরিচিত সমস্যা। সাধারণত দাঁতের এনামেল ক্ষয়, মাড়ি সরে শিকড় উন্মুক্ত বা দাঁতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফাটল থাকলে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়। ঠান্ডা আবহাওয়া দাঁতের স্নায়ুকে সংকুচিত করে, যা ব্যথার অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
● দিনে দুবার ব্রাশ করুন। নরম ব্রিসলের ব্রাশ ব্যবহার করলে দাঁতের এনামেল ক্ষয়ের ঝুঁকি কমে, দুই মিনিট যথেষ্ট দাঁতের পৃষ্ঠগুলো পরিষ্কারের জন্য। ধীরে ধীরে ব্রাশ করা উচিত।
● ঠান্ডায় যাঁদের দাঁতে ব্যথা করে, তাঁরা সেনসিটিভ বা ফ্লোরাইড টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। প্রয়োজনে ব্রাশ শেষে পেস্ট আঙুলে নিয়ে ১ মিনিট ঘষতে পারেন। এটি দাঁতের স্নায়ুকে সুরক্ষা দিয়ে ঠান্ডা-গরমের অনুভূতি কমাতে সহায়তা করে।
● ঠান্ডা পানিতে দাঁতব্যথা বাড়তে পারে। তাই কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া বা কুলি করা উপকারী। যাঁদের ক্রনিক রোগ আছে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার অ্যাসিডিটি, বিষণ্নতা, ইনহেলার ব্যবহার, কেমোথেরাপি, তাঁদের ডেন্টিস্টদের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার উপকার দেবে।
● শরীর এবং মুখ দুটিই হাইড্রেটেড (জলযুক্ত অবস্থা) রাখা জরুরি। পানি কম খেলে মুখের ভেতর শুষ্কতা বাড়ে এবং মুখের দুর্গন্ধ, মাড়ির সমস্যা ও ক্যাভিটি (দাঁতক্ষয়) হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
● চিনি গ্রহণ কমিয়ে ফাইবারযুক্ত শীতকালীন ফল-সবজি বাড়ানো ভালো। মাড়ির অস্বস্তি কমাতে সপ্তাহে কয়েকবার কুসুম গরম লবণ-পানিতে গার্গল কার্যকর। এটি জীবাণু কমাতে সহায়তা করে।
● হেঁটে বা দৌড়ানোর সময় ঠান্ডা বাতাস সরাসরি মুখ দিয়ে নিলে দাঁতের স্নায়ু ঠান্ডা লাগে, ফলে ব্যথা হতে পারে। তাই নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন।
শীতকালে মাড়িতে প্রদাহ, ফোলা বা রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে। তাপমাত্রা কমে গেলে রক্তসঞ্চালন কিছুটা ধীর হয়, যা মাড়ির স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। ব্রাশের পাশাপাশি ডেন্টাল ফ্লস বা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করুন। বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসক দেখানো উচিত। শীতের আগে বা শীতের সময় একটি সাধারণ চেকআপ দাঁতের সম্ভাব্য সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা