ভালো থাকুন

হাঁপানি আছে বুঝবেন কীভাবে, চিকিৎসা কী

অধ্যাপক ডা. মো. জাকির হোসেন সরকার, বক্ষব‍্যাধি বিশেষজ্ঞ ও সভাপতি, বাংলাদেশ ইন্টারভেনশনাল পালমনোলজি, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড স্লিপ সোসাইটি (বিপস)

আজ বিশ্ব অ্যাজমা দিবস। অ্যাজমা বা হাঁপানি নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবছরের মে মাসের প্রথম মঙ্গলবার পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাজমা ডে’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইনহেলার চিকিৎসা সবার নাগালে রাখুন’।

হাঁপানি শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহজনিত রোগ। পৃথিবীতে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর এ রোগে ভুগে সাড়ে চার লাখ মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় এক কোটি মানুষ হাঁপানির সমস্যায় ভুগছে।

হাঁপানিতে ১ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে এর প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। হাঁপানি চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ইনহেলার। এককভাবে স্টেরয়েড ইনহেলার বা উপশমকারী ওষুধের মিশ্রণে ইনহেলার অ্যাজমা চিকিৎসায় সবচেয়ে কার্যকর ও নিরাপদ চিকিৎসা।

হাঁপানি কীভাবে বুঝবেন

হাঁপানি শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এর মূল উপসর্গগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে বাঁশির মতো শব্দ হওয়া, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া বা দমবন্ধভাব। বছরে বেশ কয়েকবার, বিশেষত অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে এলেই এসব উপসর্গ শুরু হয়ে যায়। হাঁপানি রোগীরা বিভিন্ন পদার্থের প্রতি অতি সংবেদনশীল থাকেন। সেসব জিনিসের সংস্পর্শে তাঁদের উপসর্গ বাড়ে।

বেশির ভাগ রোগীর শৈশব বা অল্প বয়স থেকেই হাঁপানি, অ্যালার্জি, অতি সংবেদনশীলতার ইতিহাস থাকে। এ ধরনের রোগের ইতিহাস থাকে পরিবারেও। কারও যদি হাঁপানির লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের কাছে গেলে চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা ও ইতিহাস বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে বুকের এক্স-রে করানো উচিত। রক্তে অ্যালার্জির মাত্রা, ফেনো, স্পাইরোমেট্রি বা শ্বাসের পরীক্ষা ইত্যাদি করাতে হতে পারে।

কেন হয় অ্যাজমা

১. অ্যালার্জেন: ঘরে বা বাইরে মোল্ড, ফুলের রেণু, পশুপাখির লোম বা পাখা ইত্যাদি বস্তুর প্রতি অনেকের ক্ষেত্রে অতি সংবেদনশীলতাকারক হিসেবে কাজ করে।

২. সংক্রমণ: ফ্লু বা ভাইরাস সংক্রমণ উপসর্গ বাড়ায়।

. ধোঁয়া, ধুলা, ঠান্ডা আবহাওয়ার নানা তারতম্য অ্যাজমার তীব্রতা বাড়াতে কাজ করে।

. ওষুধ: ব্যথানাশক রক্ত তরল করার ওষুধ উপসর্গ বাড়াতে পারে।

. ব্যায়াম, দৌড়, খেলাধুলা বা অতি পরিশ্রমের পর হাঁপানির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

. অতিরিক্ত আবেগ, হাসি, কান্না, মানসিক চাপ হাঁপানির সমস্যা বাড়াতে পারে।

চিকিৎসা কী

হাঁপানির চিকিৎসা জীবনব্যাপী চলবে। কারণ, এই রোগ কখনোই পুরোপুরি সেরে যায় না। কিন্তু এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। হাঁপানির ওষুধ প্রধানত দুই ধরনের। উপশমকারী: যেমন সালবিউটামল এবং প্রতিরোধকারী যেমন লিউকোট্রিন অ্যান্টাগনিস্ট, স্টেরয়েড ইনহেলার, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসনালি সংকোচনরোধক ইনহেলার, ডক্সিসাইক্লিন ইত্যাদি।

এ ছাড়া রোগীকে এই রোগের সঙ্গে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে শিখতে হবে। একে বলা হয় শ্বাসযন্ত্রের পুনর্বাসন।