
শীতকালে বহু মানুষের অ্যালার্জির সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। এ সমস্যাকেই সাধারণভাবে বলা হয় শীতকালীন অ্যালার্জি বা উইন্টার অ্যালার্জি। এটি কোনো নতুন বা আলাদা রোগ নয়; বরং শীতকালে আমাদের জীবনযাপনের ধরন ও ঘরের পরিবেশের পরিবর্তনের ফল।
শীতকালে আমরা স্বাভাবিকভাবেই বেশি সময় ঘরের ভেতরে কাটাই। জানালা-দরজা বন্ধ থাকে, সূর্যের আলো ও বাতাসের চলাচল কমে যায়। অনেক বাড়িতে হিটার, গিজার বা অন্যান্য গরমের যন্ত্র ব্যবহৃত হয়, যা ঘরের বাতাসকে আরও শুষ্ক করে তোলে। এ পরিবেশে সহজেই জমে ধুলাবালু, ডাস্ট মাইট (ধুলার মধ্যে থাকা একধরনের অণুজীব), পোষা প্রাণীর লোম ও খুশকি, ছত্রাক বা মোল্ড—যেগুলো অ্যালার্জির প্রধান কারণ।
বিশেষ করে বিছানা, বালিশ, কম্বল, কার্পেট ও পর্দা ডাস্ট মাইটের জন্য আদর্শ স্থান। অন্যদিকে বাথরুম, রান্নাঘর বা বেজমেন্টের মতো স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ছত্রাক জন্মাতে পারে, যা চোখে দেখা না গেলেও শ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে অ্যালার্জির উপসর্গ তৈরি করে।
শীতকালীন অ্যালার্জির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ থাকা, চোখ চুলকানো ও পানি পড়া, গলা চুলকানো, শুকনা কাশি এবং কখনো কখনো মাথাব্যথা বা ক্লান্তি। অনেকেই এসব উপসর্গকে সাধারণ সর্দি-কাশি ভেবে অবহেলা করেন। তবে পার্থক্য হলো অ্যালার্জিতে সাধারণত জ্বর বা শরীর ব্যথা থাকে না এবং উপসর্গগুলো কয়েক দিন নয়; বরং সপ্তাহের পর সপ্তাহ চলতে পারে।
এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত গরম পানিতে চাদর, বালিশের কাভার ও কম্বল ধোয়া, ঘরে অতিরিক্ত আর্দ্রতা বা অতিরিক্ত শুষ্কতা এড়ানো, প্রয়োজনে ফিল্টারযুক্ত ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা এবং ঘর পরিষ্কার রাখা অ্যালার্জির ঝুঁকি কমায়। পোষা প্রাণী থাকলে তাদের শোবার ঘর থেকে দূরে রাখা এবং নিয়মিত গোসল করানোও উপকারী।
প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন, নাকের স্প্রে বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ওষুধের পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ন্ত্রণই হলো সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
শীতকে সত্যিকার অর্থে উপভোগ করতে চাইলে শুধু গরম কাপড় পরলেই চলবে না—প্রয়োজন পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর ও অ্যালার্জিমুক্ত ঘর। সচেতন থাকলেই শীতকালীন অ্যালার্জিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও স্বস্তিদায়ক জীবনযাপন সম্ভব।