বয়স বাড়বেই, তার প্রভাব পড়বে দেহ, মস্তিষ্ক ও মনে। তবে মজার ব্যাপার হলো, আপনার হিসাবের চেয়েও কম বা বেশি বয়স হতে পারে আপনার দেহের। আমাদের দিনক্ষণের হিসাব আর দেহের বয়সের হিসাব একটু আলাদা। দেহের মেটাবলিজম অর্থাৎ বিপাক ক্রিয়ার হারের সঙ্গে সম্পর্কিত এই বয়সকেই বলা হয় ‘মেটাবলিক এজ’। এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের মেটাবলিক এজ নিজের বয়সের চেয়ে বেশি।

বয়সের চেয়ে মেটাবলিক এজ বেশি হওয়ার অর্থ হলো আপনি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বেশ কিছু রোগের ঝুঁকিতে আছেন। আপনার মেটাবলিক এজ যত কম হবে, আপনার সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বাড়বে ততই। মেটাবলিক এজের হিসাব-নিকাশ অবশ্য বেশ জটিল। তবে সেই হিসাব না করেও আপনি ধারণা করতে পারবেন, আপনার মেটাবলিক এজ বেশি কি না। এ সম্পর্কে জানালেন পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ নূর।
যাঁর মেটাবলিক এজ বেশি, তাঁর মেটাবলিজমের হার তুলনামূলক কম। সহজভাবে বললে, তাঁর দেহের ক্যালরি পোড়ানোর হার কম। তাঁর বয়সের জন্য স্বাভাবিক পরিমাণ খাবার গ্রহণ করলেও দেহে মেদ জমার প্রবণতা থাকে। ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়াও মেটাবলিক বয়স বাড়ার লক্ষণ হতে পারে।
মেটাবলিক এজ বেশি হলে ক্লান্তি হতে পারে আপনার সঙ্গী। মেটাবলিক এজ বাড়লে আপনি যত খাবার খাবেন, তা থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের কাজটাই ধীর হয়ে যাবে। এমন অবস্থায় তাই প্রায়ই অবসন্ন বোধ করতে পারেন আপনি। কাজকর্মে উদ্যমের অভাব হতে পারে। সবকিছুকে বড় একঘেয়ে আর ক্লান্তিকর মনে হতে পারে।
আধুনিক জীবনধারা বড্ড জটিল। বেশির ভাগ মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে ভুলে যাচ্ছেন। ভারী বোঝার মতো দায়িত্ব চেপে বসছে। বাড়ছে মানসিক চাপ। ক্রমাগত মানসিক চাপে মেটাবলিজম বাধাগ্রস্ত হয়। চাপের সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে দেহে। তাই আপনি যদি খুব বেশি মানসিক চাপ অনুভব করেন, ধরে নিতে পারেন আপনার মেটাবলিক এজ বেশি।
শারীরিক কোনো অসুবিধার কারণে ঘুমের সমস্যায় ভুগতে পারেন যে কেউ। মানসিক চাপও ঘুমের শত্রু। যেকোনো কারণে আপনি যদি প্রায়ই ঘুমের সমস্যায় ভোগেন, তাহলে আপনার মেটাবলিজম ধীর হয়ে আসবে। তাই প্রায়ই ঘুমের সমস্যা হলে বুঝতে হবে আপনার মেটাবলিক এজ বেড়ে যাচ্ছে।
অনেকেই এ ধরনের সমস্যায় ভোগেন। অনেকে ধরেই নেন, বয়সের সঙ্গে এমন কিছু বিষয় ঘটবেই। তবে বাস্তবতা হলো, বয়স বাড়লেও আপনি মেটাবলিক এজের হিসাব-নিকাশে নিজেকে ভালো অবস্থানে রাখতে পারবেন। সময়ের বা বয়সের গতিরোধ করার অবশ্য উপায় নেই। তবে মেটাবলিক এজের গতি আপনি নিশ্চয়ই কমাতে পারবেন। আর তা করতে পারলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকবেন আপনি। স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চাই মেটাবলিক এজ কমানোর চাবিকাঠি। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক। গোটা শস্য, মৌসুমি ফলমূল ও টাটকা শাকসবজি খাবেন। পানি খাবেন পর্যাপ্ত। শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং তা বজায় রাখুন।