দৃষ্টি সমস্যাটি স্বাভাবিক। চোখের এ সমস্যায় চশমা পরতে হয়। এতে দৃষ্টি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয় না বটে, তবে দেখার সুবিধা হয়। যেহেতু দৃষ্টি সমস্যাটি নিজের নিয়মে চলতে থাকে, তাই এটি সব সময় একই পরিস্থিতিতে থাকবে না, এটি পরিবর্তনশীল। তাই মাঝেমধ্যে চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়। প্রশ্ন হলো, কত দিন পরপর চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
বিষয়টি বুঝতে হলে দৃষ্টি সমস্যা বা রিফ্রেকটিভ এরর সম্পর্কে ধারণা দরকার। কোনো কিছু দেখার জন্য সেই বস্তু থেকে উৎসারিত আলোকরশ্মি চোখে আপতিত হয়ে রেটিনার কোনো বিন্দুতে মিলিত হতে হবে। আপতিত আলোকরশ্মি চোখের ভেতর প্রবেশের সময় কর্নিয়া ও প্রাকৃতিক লেন্স অতিক্রম করার সময় দিক পরিবর্তন করে এবং রেটিনার কোনো বিন্দুতে মিলিত হয়।
মিলিত বিন্দুকে বলা হয় ফোকাল পয়েন্ট। পুরো বিষয়টিকে বলা হয় রিফ্রাকশন। কোনো কারণে আলোকরশ্মি রেটিনার কোনো বিন্দুতে মিলিত হতে ব্যর্থ হলে, অর্থাৎ ফোকাল পয়েন্ট রেটিনার সামনে (মায়োপিয়া) বা পেছনে (হাইপারমেট্রোপিয়া) হলে তখন দৃষ্টি সমস্যা হবে। এটিই রিফ্রেকটিভ এরর বা সাধারণ দৃষ্টি সমস্যা।
শিশুদের ক্ষেত্রে কর্নিয়ার পরিপক্বতা ও চোখের লেন্সের পরিপক্বতা একটি চলমান প্রক্রিয়া। জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে এই পরিপক্বতার কাজটি স্বাভাবিক নিয়মে শেষ হওয়ার কথা।
কারও কারও বেলায় এর ব্যত্যয় হতে পারে। পরিপক্বতা লাভের সময়সীমা কমবেশি হতে পারে, আবার পরিপক্বতা লাভের পরও কিছু ঘাটতি থেকে যেতে পারে। কারও চশমার প্রয়োজন হচ্ছে, কিন্তু একটা সময় পর তাঁর পরিপক্বতার ঘাটতি পূরণ হয়ে গেলে তখন চশমার প্রয়োজন হবে না। তবে কার হবে, কত দিনে হবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। যাঁদের চশমার পাওয়ার কম থাকে, তাঁদের অনেকের ক্ষেত্রে বয়স ২৫ বছর বা এর আশপাশে হলে একসময় আর চশমার প্রয়োজন না–ও হতে পারে।
তবে বিশেষ কিছু অবস্থায় চোখের পাওয়ার স্বল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ কমবেশি হতে দেখা যায়। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা ওঠানামা করলে চশমার পাওয়ারও ওঠানামা করে। এটি সাধারণত চোখের লেন্সের ওপর সুগারের প্রভাবের জন্য হয়ে থাকে। রক্তে অনিয়ন্ত্রিত সুগারের ক্ষেত্রে চোখের তরল বা অ্যাকুয়াসে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং লেন্সে সুগার প্রবেশ করে। তখন আগের পাওয়ার বা চশমা কাজ করে না।
যাঁদের চোখের প্রেশার বেশি বা গ্লুকোমার সমস্যা আছে, তাঁদের বেলায়ও ঘন ঘন চশমা বদলানোর প্রয়োজন পড়ে। আবার কিছু ওষুধ খেলে হঠাৎ চোখের পাওয়ার বদলে যেতে পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ছয় মাস পরপর পাওয়ার পরীক্ষা করানো ভালো। ডায়াবেটিস থাকলে বছরে দুবার বা অন্ততপক্ষে একবার চোখ পরীক্ষা করা জরুরি। ঘন ঘন চোখের পাওয়ার পরিবর্তিত হলে ডায়াবেটিস আছে কি না ও সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, দেখতে হবে।
ডা. মো. ছায়েদুল হক, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল