গর্ভকালের নানা বিষয় নিয়ে সমাজে কিছু ধারণা চালু আছে। যুগের পর যুগ ধরে এসব বিশ্বাস করে আসছে মানুষ। প্রচলিত এমন ১০টি ধারণা বা মিথের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আসলে কতটা, তা জানালেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. আনিকা তাবাসসুম। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।

আনারস ও কাঁচা বা আধপাকা পেঁপেতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা অত্যধিক পরিমাণে খেলে জরায়ুমুখ কিছুটা খুলে যেতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো, জরায়ুমুখ খোলার জন্য যতটা পেঁপে বা আনারস প্রয়োজন, আদতে তা কেউই খান না। তাই দুই বেলা স্বাভাবিক পরিমাণে এসব ফল খেলে গর্ভপাত হবে না।
গর্ভাবস্থায় ভারী কাজ করা বারণ। তবে বিশেষ কোনো জটিলতা না থাকলে হালকা বা মাঝারি ব্যায়াম করতে বাধা নেই। নির্দিষ্ট কোনো জটিলতার কারণে যদি বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা।
এ ধরনের কোনো নির্দেশনা না দেওয়া হলে কোমরের ব্যথা ও অন্যান্য জটিলতা এড়াতে শরীরচর্চা করা ভালো। কারণ, গর্ভাবস্থায় দেহের আকৃতিতে পরিবর্তন আসার ফলে কোমরের ব্যথার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তাই ব্যায়ামের অভ্যাস রাখা প্রয়োজন। ব্যায়ামে মানসিক চাপও কমে। তবে ভারী কিছু উত্তোলন বা ভারী ব্যায়াম এ সময় এড়িয়ে চলা উচিত। যোগব্যায়ামও এ সময় বেশ উপকারী। তবে এ সময় কোন ধরনের যোগব্যায়াম করা যাবে, বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিন।
এটা দুঃখজনক যে আধুনিক যুগেও গায়ের রং নিয়ে নেতিবাচকভাবে চিন্তা করেন কিছু মানুষ। কার গায়ের রং কেমন হবে, তা নির্ভর করে জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর। কেবল মা–বাবার বৈশিষ্ট্যই নয়, তাঁদের পরিবারের আগের প্রজন্মের কারও বৈশিষ্ট্যও তাঁদের সন্তানের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে। তাই দুধ, কাঁচা হলুদ, জাফরান প্রভৃতি কোনো কিছু গ্রহণের মাধ্যমেই গর্ভের সন্তানের গায়ের রং ফরসা করার সুযোগ নেই। তবে দুধ হবু মা ও অনাগত সন্তানের জন্য পুষ্টিকর।
কোনো খাবারের প্রতি ‘ক্রেভিং’ বা তীব্র ইচ্ছা অন্তঃসত্ত্বার হরমোনের অবস্থা, পুষ্টি ও নিজস্ব পছন্দের ওপর নির্ভর করে। গর্ভের সন্তান ছেলে নাকি মেয়ে, তার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
মায়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা, পেটের আকৃতি বা পেটের দাগের ধরন, গর্ভে সন্তানের অবস্থান প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে কেউ কেউ অনুমান করেন যে গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে। আদতে এ বিষয়গুলো মায়ের নিজস্ব শারীরিক অবস্থার ওপরই নির্ভর করে।
গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে সাধারণত গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু জটিলতা কিংবা জটিলতার ইতিহাস থাকলে এ বিষয়ে চিকিৎসক আলাদা নির্দেশনা দেন।
সাধারণ পথে যাতায়াত করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয় না। তবে মা তাতে চাপ, ক্লান্তি বা অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। কিন্তু অতিরিক্ত ঝাঁকুনি লাগে, এমন পথে বা যানবাহনে না যাওয়াই ভালো। বিশেষ করে প্রথম তিন ও শেষের দেড় মাস বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত।
মায়ের একেবারে দ্বিগুণ খাবার খেতে হবে, এ ধারণা ঠিক নয়; বরং অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণে মায়ের ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। প্রথম তিন মাস পার হওয়ার পর থেকে বাড়তি ৩০০ কিলোক্যালরি গ্রহণ করাই যথেষ্ট।
নামে ‘মর্নিং সিকনেস’ হলেও বমি বমি ভাব, বমি বা মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যাগুলো দিনের যেকোনো সময়ই হতে পারে। তবে সকালে একটু বেশি হয়ে থাকে বলেই এই নাম দেওয়া হয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তিতে চুল রং করানো হলে গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে সতর্কতা হিসেবে প্রথম তিন মাস চুল রং না করানো ভালো।