মা হওয়া একটি চমৎকার অনুভূতি। কিন্তু এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে একজন নারীকে অনেক কষ্ট পেতে হয়। নানা জটিলতার কারণে কখনো কখনো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের প্রয়োজন হয়। তবে বেশির ভাগ পরিবারই অবশ্য চান স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে সন্তান হোক।
গর্ভাবস্থায় একজন নারী যত বেশি সক্রিয় থাকবেন, স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা তত বাড়বে। তবে ভারী জিনিস তোলা বা বেশি ওঠানামার কাজ করা যাবে না। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তবে অতিরিক্ত ওজন বাড়ানো ঠিক নয়।
স্বাভাবিক প্রসবের উপকারিতা অনেক। সিজারের মাধ্যমে প্রসবে রক্তপাত ও সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় বেশি। সিজারের পর পেটের ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়। মায়ের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগে। আর স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুর শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জিজনিত রোগে ভোগার ঝুঁকি কম।
প্রসব ব্যথামুক্ত করার পদ্ধতি
প্রসবের সময় যেসব স্নায়ু ব্যথার অনুভূতি বহন করে, ওষুধ দিয়ে সেগুলোকে অবশ করে দেওয়া হয়। এর ফলে সন্তান জন্মদানের সময় তীব্র ব্যথা হলেও মা সেটা অনুভব করতে পারেন না। তবে হাঁটাচলা বা অন্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন। এই প্রক্রিয়ার নাম ‘এপিডুরাল এনালজেসিয়া’।
লেবার পেইন শুরুর পর থেকে জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলা (১০ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত সময়কে প্রথম পর্যায় ধরা হয়। দ্বিতীয় পর্যায় জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলার পর থেকে প্রসব পর্যন্ত। তৃতীয় পর্যায় শেষ হয় গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ডেলিভারির মাধ্যমে।
প্রথম পর্যায়ে জরায়ুর মুখ যখন ৪–৫ সেন্টিমিটার খুলে যায়, তখনই অবশ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এতে মেরুদণ্ডের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং এখান থেকে কিছুক্ষণ পরপর স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেসে ওষুধ দেওয়া হয়। এভাবে সহজেই ব্যথামুক্ত প্রসব করানো সম্ভব।
করণীয়
এপিডুরালের জন্য আগে থেকে একজন নারীকে যাচাই–বাছাই করে নির্ধারণ করতে হয়। গর্ভাবস্থায় অন্তত একবার ‘অ্যানেস্থেসিস্ট’ চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করাতে হবে। প্রসবকালে মা ও বাচ্চাকে পর্যবেক্ষণের জন্য রাখতে হবে অভিজ্ঞ লোকবল। একজন অভিজ্ঞ অ্যানেস্থেসিস্ট ও জরুরি ভিত্তিতে সিজার করার সুবিধা থাকাটা খুব জরুরি। এ ছাড়া মা ও বাচ্চার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য সিটিজি মেশিনের প্রয়োজন হয়।
যেসব সমস্যা হতে পারে
তবে এই প্রক্রিয়ার কিছু সমস্যা আছে। ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে মা যেহেতু জোরে পুশ করতে পারে না, তাই এখানে সময় বেশি লাগার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া এই প্রক্রিয়া কিছুটা ব্যয়বহুল। এপিডুরাল দিলেই সব সময় স্বাভাবিক প্রসব সফল হবে তা নয়। অনেক সময় কোনো পর্যায়ে এসে বাচ্চা আটকে গেলে বা বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত সিজার করার দরকার হতে পারে।
অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আঞ্জুমান আরা বেগম: স্ত্রীরোগ, প্রসূতিবিদ্যাবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, ঢাকা