দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘স্পেস-আউট কম্পিটিশন’ নামে এক প্রতিযোগিতা নিয়ে হঠাৎ বিশ্বব্যাপী চলছে আলোচনা। ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব যেন সময়ের সঙ্গে বিশ্ববাসী আরও বেশি অনুধাবন করছে। ইতিমধ্যে হংকং, টোকিও, বেইজিং, রটারডাম, তাইপেসহ বিশ্বের আরও বেশ কটি শহরে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রতিযোগিতা।

প্রতিযোগিতাটির আসর বসে প্রাকৃতিক পরিবেশে। খোলা মাঠে। চারপাশে গাছপালা। থাকে দর্শকের বসার আসন। সেই মাঠে প্রতিযোগীরা বসেন ম্যাট পেতে। চ্যালেঞ্জ থাকে দেড় ঘণ্টা কিছুই না করার। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। কেউ ফোন হাতে নিতে পারবেন না। বই পড়তে পারবেন না। চলাফেরা করতে পারবেন না। ঘুমিয়ে পড়তে পারবেন না। অনেকেই প্রতিযোগিতা চলাকালীন কিছু না করে থাকতে না পারার কারণে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। অনেকে আবার ঘুমিয়েও পড়েন।
যিনি পুরোটা সময় সবচেয়ে বেশি ‘রিল্যাক্সড’ থাকবেন, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক থাকবে, নড়াচড়া করবেন সবচেয়ে কম, তিনিই বিজয়ী। বিজয়ীকে সেরা ‘মানসিকভাবে স্থিতিশীল মানুষ’–এর আখ্যা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় ‘দ্য থিঙ্কার’ ট্রফি ও সার্টিফিকেট।
সময়ের সঙ্গে কিছু না করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটি অনুধাবন করে কয়েকজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও থেরাপিস্টকে সঙ্গে নিয়ে ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট হুপসাইয়ং ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে এই প্রতিযোগিতা শুরু করেন। ধীরে ধীরে এই প্রতিযোগিতা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
বর্তমান জীবনযাপন থেকে মেন্টাল রেস্ট বা মনের বিরাম অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। কিন্তু স্বাস্থ্যকর, সুখী জীবনযাপনের জন্য মনের বিশ্রামের বিকল্প হয় না। আধুনিক জীবনে তাই স্থিতি আনতে, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, মনোযোগ বাড়াতে, মানসিকভাবে সেরে উঠতে, সর্বোপরি একটা ভালো জীবনের জন্য মানুষ ক্রমেই এই প্রতিযোগিতার গুরুত্ব অনুধাবন করছে।
এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ‘কিছু না করাও গুরুত্বপূর্ণ’—এই বার্তা দিতে চান মনোবিদেরা। এর ফলে ‘রিকানেক্ট’ করা সহজ হয়, একাডেমিক পড়াশোনার চাপ সামাল দেওয়া সহজ হয় এবং পেশাগত কাজের মান বাড়ে। ট্রমা কাটিয়ে উঠতে ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো রাখতেও সাহায্য করে। ধৈর্যের সঙ্গে যেকোনো সমস্যা মোকাবিলা করতে অনুপ্রাণিত করে এই প্রতিযোগিতা।
দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষকে নিয়মিত ব্যস্ততা, পড়াশোনা ও কাজের চাপ থেকে মুক্তি দিতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এখন বিশ্বব্যাপী মানুষ এই প্রতিযোগিতার উপযোগিতা অনুধাবন করতে পারছে।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস আপফ্রন্ট