ঊরুতে যে মেদ থাকে, তা জমা হয় ত্বকের নিচেই
ঊরুতে যে মেদ থাকে, তা জমা হয় ত্বকের নিচেই

ঊরুর মাপের সঙ্গে কি সত্যিই আয়ুর কোনো সম্পর্ক আছে

স্থূলতা এমন বহু রোগের জন্য দায়ী, যা থামিয়ে দিতে পারে জীবনের স্পন্দন। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না, তা থেকে স্থূলতার ধারণা পাওয়া যায়। আরও ভালোভাবে ঝুঁকিটা বোঝা যায় কোমর ও নিতম্বের মাপ থেকে। তবে ঊরুর মাপের সঙ্গে কি স্থূলতার এবং আয়ুর কোনো সম্পর্ক আছে? এ বিষয়ে স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন–এর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম

ঊরুর মেদ কি খারাপ?

সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, মেদ বা চর্বি মানেই তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আদতে বিষয়টা এমন নয়। ত্বকের নিচে মেদ জমা হলেই যে আপনার রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি থাকবে বা অন্যান্য জটিল সমস্যার ঝুঁকি থাকবে, তা নয়।

ঊরুতে যে মেদ থাকে, তা জমা হয় ত্বকের নিচেই। আর ত্বকের নিচে যে মেদ জমা হয়, তা থেকে ‘অ্যাডিপোনেকটিন’ নামের একধরনের রাসায়নিক নিঃসরণ হয়। এই রাসায়নিক প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলে হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। বুঝতেই পারছেন, ঊরুর মেদ খুব একটা খারাপ নয়, যদি অন্যান্য খারাপ মেদ না থাকে।

অন্যদিকে পেটের ভেতরে থাকা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আশপাশে জমা হওয়া মেদ হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যাঁদের এ ধরনের মেদ থাকে, তাঁদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেশি। হাত, পা কিংবা ঊরুতে তেমন মেদ না থাকলেও যদি কারও কেবল পেটের ভেতর এমন মেদ থাকে, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি রোগের আশঙ্কা বেশি থাকে।

গবেষণায় যা পাওয়া গেছে

কিছু গবেষণার ফলাফল বলছে, যাঁদের ঊরুর মাপ ৬০ সেন্টিমিটার বা এর কম, তাঁদের আয়ু তুলনামূলক কম। আর তাঁদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে হৃদ্‌রোগে, অন্যদের তুলনায় তাঁদের হৃদ্‌রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। ঊরুর মাপ কম হওয়ার অর্থ হলো, সেখানে মেদ এবং পেশি দুটির পরিমাণই কম।

এ থেকে বোঝা যায়, তাঁদের ঊরুর পেশি আদতে খুব একটা সুগঠিত ছিল না। আরও ধারণা করা যায়, স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চার দিক থেকে তাঁরা বেশ খানিকটা পিছিয়ে ছিলেন। অর্থাৎ ব্যায়ামের প্রতি সম্ভবত খুব একটা যত্নশীল ছিলেন না তাঁরা।

তবে এসব গবেষণা থেকে এমনটাও বলা যায় না যে ঊরুর মাপ দীর্ঘায়ু বা সুস্থতার জন্য নিশ্চিত কোনো নির্দেশক।

যেভাবে বোঝা যায় ঊরুর মাপ

ঊরুর মাপ নিতে হয় দাঁড়ানো অবস্থায়। ঊরুর মাঝামাঝি অংশ, অর্থাৎ যে অংশটি সবচেয়ে চওড়া, সেখানে ধরতে হয় মাপের ফিতা। খুব আঁটসাঁট করেও নয়, আবার ঢিলেভাবেও নয়। খেয়াল রাখতে হয়, ফিতাটি যেন উল্টে না যায়।

ঊরুর মাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেই যে কেউ সুস্থ থাকবেন, এমনটাও নয়

শেষ কথা

ঊরুর মাপ ৬০ সেন্টিমিটারের বেশি হওয়া একজন ব্যক্তির দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। গবেষণার ফলাফল বলছে এমনটাই। তবে ঊরুর মাপই শেষ কথা নয়। আর ঊরুর মাপ বাড়ানোর চেষ্টা করলেই যে কেউ সুস্থ থাকবেন, এমনটাও নয়।

সুস্থ থাকার জন্য বরং কোমরের মাপ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কোমর ও নিতম্বের মাপের অনুপাতও সুস্থতার আরেকটি নির্দেশক। উচ্চতা অনুযায়ী ওজন ঠিক আছে কি না, সে হিসাব পাবেন বডি মাস ইনডেক্সে (বিএমআই)।

দীর্ঘায়ুর জন্য সব সময়ই স্বাস্থ্যকর জীবনচর্চাকে উৎসাহিত করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমাতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। তবে হাঁটাহাঁটি, জগিং, দৌড়ঝাঁপ, সাঁতার, দড়িলাফ বা সাইকেল চালানোর মতো ব্যায়ামে ঊরুর পেশিও সুগঠিত হয়।