দীর্ঘ সময় বসে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়
দীর্ঘ সময় বসে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়

আট ঘণ্টা বসে কাজ করে যে ঝুঁকিতে পড়ছেন

রোজ আট ঘণ্টা অফিসে বসেই কাজ করেন অনেকে। এসব কাজের বেশির ভাগই হয় ডেস্কে, কম্পিউটারে। এমন কাজে পরিশ্রম হয় ঠিকই, তবে তা কায়িক শ্রম নয়। আপনি ঠিকই কাজ করছেন, কিন্তু আপনার শরীরটা বসে আছে। দীর্ঘ সময় বসে থাকা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। কেন, জানেন?

অফিসে তো বটেই, ঘরেও একটানা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন অনেকে। এমনকি কাজকর্ম সেরে বাকি সময় পার করেন বসে বসে। একটানা অনেকটা সময় বসে থাকলে শরীরে জড়তা চলে আসে। ব্যথাবেদনাও হতে পারে। আর সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। তা ছাড়া মনের ওপরে পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন রাজধানীর পপুলার মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নওসাবাহ্ নূর

যেসব সমস্যা হতে পারে

আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা প্রায়ই কোমরব্যথা বা ঘাড়ব্যথায় ভোগেন। এসব ব্যথার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে দায়ী আমাদের দেহভঙ্গি। অনেক অফিসেই এমন চেয়ার-টেবিল বা ডেস্কের ব্যবস্থা থাকে না, যাতে সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রেখে বসে কাজ করা যায়।

  • একই ভঙ্গিতে বসে কাজ করতে করতে একসময় ফ্রোজেন শোল্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন কেউ কেউ।

  • কম্পিউটারের পর্দায় একটানা তাকিয়ে থাকার জন্য চোখের শুষ্কতাও দেখা দিতে পারে।

  • বদ্ধ ঘর, যেখানে বায়ুপ্রবাহ কম থাকে, সেখানে অ্যালার্জিজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

  • কারও কারও পায়ে পানি আসে, পা ভারী হয়ে যায়।

  • একটানা বসে কাজ করতে করতে একঘেয়েমি চলে আসাও খুব স্বাভাবিক।

ভবিষ্যতের বড়সড় স্বাস্থ্যঝুঁকি

একটানা বসে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এই বসে কাজ করার অভ্যাস। বাড়তে পারে রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল। পরবর্তী জীবনে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে এভাবেই।

সুস্থ থাকতে যা করবেন

  • সুস্থ থাকতে দেহটাকে সচল রাখা চাই-ই চাই। ঠিক কতটা সময় বসে কাজ করা নিরাপদ, সে বিষয়ে সর্বজনস্বীকৃত কোনো নির্দেশনা নেই। আর জীবনের প্রয়োজনে কাজ তো করতেই হবে। তবে প্রতি ঘণ্টায় একবারের জন্য হলেও চেয়ার ছেড়ে উঠুন, অফিসের ভেতরেই একটু হাঁটাহাঁটি করুন। হাত এবং কাঁধও নাড়াচাড়া করুন।

  • কাজের ফাঁকে যেকোনো সময় বিরতি পেলে মুঠোফোনের পর্দায় সময় ব্যয় না করে চেয়ার ছেড়ে উঠুন। হাঁটুন, হাত-পায়ের পেশির সঞ্চালন করুন যতটা সম্ভব।

  • যেকোনো ডিজিটাল পর্দায় একটানা কাজ করার সময় ২০ মিনিট পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকুন।

  • প্রার্থনার জন্য উঠতে পারেন। সহকর্মীকে কিছু বলতে হলে নিজে উঠে যেতে পারেন।

  • সুযোগ থাকলে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়ানোর পর দেহভঙ্গি খানিকটা বদলে যেসব ব্যায়াম করা যায়, সেসব করে নিন অন্তত পাঁচবার। এ ধরনের একটি ব্যায়াম হলো স্কোয়াট।

  • নিজের ডেস্কে বসেই দুপুরের খাবার বা নাশতা না খেয়ে একটু হেঁটে খাবার জায়গা পর্যন্ত যান।

  • বসার ব্যবস্থা স্বস্তিদায়ক না হলে অফিসের সবাই মিলে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। তাঁদের অনুরোধ করুন, যাতে কর্মীদের বসার ব্যবস্থাটি স্বাস্থ্যকর হয়। চেয়ারগুলো যাতে ভালো মানের হয়, চেয়ারের গড়ন যাতে মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক বক্রতা অনুযায়ী হয়, টেবিল বা ডেস্কের উচ্চতাও যেন হয় স্বস্তিদায়ক। দাঁড়িয়ে কাজ করা যায়, এমন ডেস্কে কিছুটা সময় কাজ করার ব্যবস্থাও করতে পারেন।

  • বসা অবস্থায়ও হাত-পা কিছুটা নাড়াচাড়া করুন। পায়ে পানি আসার প্রবণতা থাকলে পায়ের নিচে একটু উঁচু, সামান্য ঢালু কিছু একটা রাখতে চেষ্টা করুন। একটা নিচু টুল রাখলেও উপকার পাবেন।

  • অফিসে যাতায়াতের পথে খানিকটা হাঁটুন। সব সময় লিফট ব্যবহার না করে কয়েক তলা সিঁড়ি ভেঙে ওঠানামা করুন।

  • অফিসের আগে বা পরে শরীরচর্চার অভ্যাস করুন। সপ্তাহে অন্তত দেড় শ মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম করুন, অথবা অন্তত ৭৫ মিনিট ভারী ব্যায়াম করুন। কিংবা এই দুই ধরনের ব্যায়াম মিলিয়েও নিতে পারেন। এর পাশাপাশি দেহের সব পেশির জোর বাড়ানোর ব্যায়ামও করুন সপ্তাহে অন্তত দুবার।