খাবারে ব্যবহৃত তেল হিসেবে অলিভ অয়েল, অর্থাৎ জলপাই তেল বেশ স্বাস্থ্যকর। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলকে আরও একটু বেশি স্বাস্থ্যকর বিবেচনা করা হয়। তবে আদতেই কি তা সাধারণ জলপাই তেলের চেয়ে বেশি উপকারী? আর সব ধরনের রান্নায় কি এই স্বাস্থ্যকর তেল ব্যবহার করা যায়?

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ‘অলিভ অয়েলে যে ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, তা আমাদের হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য ভালো। এই তেল আমাদের দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট জোগায়। প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। যেকোনো ধরনের জলপাই তেল থেকেই এসব উপকার পাওয়া যায়। জলপাই থেকে নির্যাস আহরণের প্রক্রিয়াটি একটু আলাদা বলেই এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, যেকোনো ধরনের জলপাই তেল নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতির রান্নায় ব্যবহার করা যায়।’
এ সম্পর্কে আরও জেনে নেওয়া যাক এই পুষ্টিবিদের কাছ থেকে।
সাধারণ জলপাই তেল যতটা প্রক্রিয়াজাত, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ততটা নয়। বরং এটি একটু বেশিই প্রাকৃতিক। তাই এই তেল থেকে আপনি খুব একটা সুগন্ধ না-ও পেতে পারেন। তবে সাধারণ জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলের চেয়ে এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রা খানিকটা বেশি থাকে। প্রদাহ কমাতে বেশি সহায়তা করে এই তেল। এটুকুই পার্থক্য। তবে স্বাস্থ্যকর হলেও কোনো তেলই খুব বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা যাবে না। তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকবেই।
সয়াবিন তেল, শর্ষের তেল, সূর্যমুখী তেল বা ক্যানোলা তেলের চেয়ে যেকোনো অলিভ অয়েলই বেশি স্বাস্থ্যকর। তবে যেকোনো ধরনের জলপাই তেল খাবারে ব্যবহার করতে হলে আপনাকে অবশ্যই এর ব্যবহারবিধি খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের দেশের প্রচলিত রান্নার ধারায় কোনো জলপাই তেলই ঠিক রান্নার তেল হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী নয়। যেকোনো অলিভ অয়েলের বৈশিষ্ট্যই হলো, বেশ কম তাপমাত্রাতেই তা থেকে ধোঁয়া ওঠে। অর্থাৎ বেশ কম তাপমাত্রাতেই এর গঠন ভেঙে যায় এবং ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসৃত হয়।
তাই মৃদু তাপে ১০ মিনিটের কম সময়ে যেসব পদ রান্না হয়ে যায়, কেবল সেসব পদেই ব্যবহার করা যায় এ ধরনের তেল। কাঁচা অবস্থায় গ্রহণ করতে পারলে তা-ও নিরাপদ।
যেকোনো অলিভ অয়েলের ব্যবহার হতে পারে সালাদ, ডিম পোচ, ডিম ভাজা, আলুভর্তার মতো পদে। রান্নার শেষ দিকে বাগাড় দেওয়ার সময়ও চাইলে ব্যবহার করতে পারেন এসব তেল। সাঁতলানো পদেও ব্যবহার করা যায়। কাজে লাগাতে পারেন বেকিংয়েও।
যত স্বাস্থ্যকর তেলই হোক না কেন, খাবারের মাধ্যমে সারা দিনে সব মিলিয়ে চার-পাঁচ চা-চামচের বেশি তেল গ্রহণ করা যাবে না। স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে অলিভ অয়েল বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল দিয়েই যদি আপনি গরুর নেহারি, গরুর কলিজা-মগজ বা যেকোনো লাল মাংসের পদ তৈরি করেন, তাহলে কিন্তু এসব খাদ্য উপকরণের চর্বিও আপনার শরীরে প্রবেশ করবে। তাই স্বাস্থ্যকরভাবে খেতে হলে অলিভ অয়েল বা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কোন ধরনের খাবারের সঙ্গে ব্যবহার করছেন, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন।