লাউ, এই সবজিতে থাকে না বাড়তি ক্যালরি। এ জন্য অনেক পুষ্টিবিদই ডায়েট চার্টে লাউয়ের তরকারি রাখার কথা বলেন।
লাউ সুস্বাদু সবজি, রান্নায় খুব একটা মসলার প্রয়োজন পড়ে না। লাউয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এই সবজিতে বাড়তি ক্যালরি থাকে না।
ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বললেন, লাউ সহজে হজম হয়। লাউয়ে থাকা পানি ও আঁশ দেহের জন্য উপকারী। লাউয়ে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিংকসহ নানা রকম খনিজ উপাদান। আরও আছে ভিটামিন এ। এতে শর্করার পরিমাণ খুব কম। ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করা তাই সহজ।
ব্যাপারটা এমন নয় যে লাউ খেলেই আপনার দেহের মেদ ঝরে যাবে। খেতে হবে নিয়ম মেনে। কীভাবে লাউ খাওয়া সবচেয়ে ভালো, জেনে নিন এই বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই।
বেশি লাউ, কম ভাত
ধরা যাক, আপনি রাতে ভর্তা, ভাজি, রান্না সবজি আর মাছ বা মাংস দিয়ে অনেকটা ভাত খেলেন। আপনি সব খাবারের পুষ্টি উপাদান ঠিকই পাবেন। তবে এভাবে খাওয়ার ফলে ভাতের বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ করছেন। তা ছাড়া ভাজিতে ব্যবহৃত তেলেও বাড়বে ক্যালরি। ভর্তায়ও তেল ব্যবহার করা হয় অনেক সময়।
ভর্তা, ভাজি বা রান্নায় ব্যবহৃত সবজিতে যদি ক্যালরির মাত্রা বেশি থাকে, তাহলেও মুশকিল। বুঝতেই পারছেন, এভাবে ভাত খাওয়াটা পুষ্টিকর হলেও স্বাস্থ্যকর নয়। অথচ আপনি যদি সাদামাটা লাউয়ের তরকারি বেশি পরিমাণে নিয়ে তা অল্প পরিমাণ ভাতের সঙ্গে খেয়ে নেন, তাহলে অনেকটাই কম ক্যালরি গ্রহণ করবেন। তাই রাতের খাবারে সবজি হিসেবে লাউ খাওয়া ভালো।
সঙ্গে মাছ বা মুরগির মাংসও রাখতে পারেন। দিনের বেলায় অন্যান্য সবজির পাশাপাশিও লাউয়ের তরকারি খাওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে শর্করাজাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু প্রভৃতির পরিমাণ যেন কম থাকে।
আমিষে পূর্ণতা
লাউ রান্নার সময়ই এর সঙ্গে ডাল, মাছ বা মুরগির মাংস যোগ করতে পারেন। তাহলে একটি সবজির পদ থেকেই আপনি পাবেন আমিষও। আমিষজাতীয় এসব খাবারও হজম হতে একটু বেশি সময় লাগে। অর্থাৎ এমন পদ খাওয়ার পরে পেট ভরা লাগবে, সহজে ক্ষুধা পাবে না। আর পুষ্টির ভারসাম্যও হবে সহজে।
বিশেষ ক্ষেত্রে
স্তন্যদায়ী মায়ের জন্য লাউ দারুণ এক খাবার। লাউয়ে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় এ সময় মায়ের বাড়তি পানির চাহিদা পূরণ হয়। কালিজিরা দিয়ে লাউয়ের তরকারি করা হলে তা নতুন মায়ের দুধের পরিমাণ বাড়াতেও সাহায্য করে।
তবে সবটাই ভালো নয়
ভালো বলে প্রতিদিনই যে লাউয়ের তরকারি খাবেন, তা কিন্তু করতে যাবেন না। ক্রমাগত একই ধরনের খাবার খাওয়া হলে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে।
কেউ কেউ কাঁচা লাউয়ের রস খেয়ে থাকেন। তবে এটা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। এতে হজমে সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে খেলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। তাই লাউ রান্না করে খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।
লাউয়ের পায়েস করলে তাতে চিনি দেওয়া হয়। তবে সুস্থতার চর্চায় চিনি বর্জন করতে বলা হয়। এমনকি মধু বা কৃত্রিম চিনিও এর স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়। তাই লাউ দিয়ে তৈরি হলেও পায়েস এড়িয়ে চলা উচিত। কালেভদ্রে খাওয়া যেতে পারে, তবে সেটিও পরিমিত পরিমাণে।