ভালোবাসলেও যে কাউকে ইচ্ছেমতো ‘মিষ্টি কিছু’ দিতে নেই, জানেন তো?
ভালোবাসলেও যে কাউকে ইচ্ছেমতো ‘মিষ্টি কিছু’ দিতে নেই, জানেন তো?

‘তোমায় দেব মিষ্টি কিছু’—কেন সবাইকে মিষ্টি দিতে যাবেন না

আমুদে নাচের সঙ্গে ‘তোমায় দেব মিষ্টি কিছু, তোমায় যদি পাই, তোমায় আমি ভালোবাসি, তোমায় আমি চাই’ গাইতে গাইতে ক্রেতার হাতে পণ্য তুলে দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভালোবাসার সঙ্গে মিষ্টি স্বাদের নিবিড় যোগাযোগ। তবে ভালোবাসলেও যে কাউকে ইচ্ছেমতো ‘মিষ্টি কিছু’ দিতে নেই, জানেন তো?

ভালোবাসা নাকি এক মিষ্টি নেশা। আদতে মিষ্টি খাবার তো এক নেশাই বটে। ‘সুগার ক্রেভিং’ হয় অনেকেরই। সারা দিন টক, ঝাল, নোনতা—নানা স্বাদের নানা খাবার খাওয়ার পরও মনটা খুব করে চায় একটু মিষ্টি স্বাদ। তাতেই জুড়ায় প্রাণ।

ভালোবাসার সঙ্গে মিষ্টি

ভালোবাসার মানুষকে ‘সুইটহার্ট’ বলে ডাকেন অনেকে। ব্যাপারটা এমন, যেন কেবল ‘হার্ট’ বললেও বোঝানো যায় না। সঙ্গে মিষ্টির অস্তিত্ব জানান দেওয়া না হলে আবেগের প্রকাশটাই ঘটে না ঠিকঠাক।

প্রিয়জনকে ‘হানি’ বা ‘সুইটি পাই’ বলেও সম্বোধন করেন কেউ কেউ। বিয়ে ও জীবনের নানা সাফল্য উদ্‌যাপনের আনুষ্ঠানিকতায়ও থাকে মিষ্টিমুখের আয়োজন। বাগ্‌দান পর্বের স্থানীয় নামেও আছে মিষ্টির উপস্থিতি—‘পানচিনি’। সম্পর্কের সৌন্দর্য প্রকাশ করতেও বলা হয় ‘মিষ্টি সম্পর্ক’ বা ‘মধুর সম্পর্ক’।

ভাইরাল ‘মিষ্টি কিছু’

প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে কেন ভালো লাগে, জানেন? ডোপামিন আর অক্সিটোসিনের মতো ভালো লাগার হরমোনগুলোর নিঃসরণ বাড়ে তখন। মিষ্টি খাবার খেলেও ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। মন খারাপের সময়েও মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন বহু মানুষ। মিষ্টি খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ভালো লাগার অনুভব।

ভালোবেসে কাউকে ‘মিষ্টি কিছু’ দিতে চাওয়ার বিষয়টিও তাই হয়ে উঠেছে ক্রেতাকে আকর্ষণের এক মাধ্যম। যেমনটা দেখা গেল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। সারি বেঁধে কেক, মিষ্টি ও পুডিং বিক্রি করতে থাকা মানুষের ভিড়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছে এক কিশোর।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ‘তোমায় দেব মিষ্টি কিছু’ গানটি গাইতে গাইতে ক্রেতার হাতে পণ্য তুলে দিচ্ছে এক কিশোর (বয়স বিবেচনায় তার মুখ ঘোলা করে দেওয়া হলো)

ভারতীয় শিল্পী ঊষা উত্থুপের ‘উরি উরি বাবা’ গানটি থেকে কয়েকটি লাইন গেয়ে মজার ভঙ্গিতে নিজেকে উপস্থাপন করেছে সে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার ভিডিওগুলো ঘিরে মন্তব্যের ছড়াছড়ি।

এই বয়সী কাউকে এমন কাজে উৎসাহ দেওয়া উচিত কি না, কিংবা যেভাবে ফুটপাত দখল করে ‘মিষ্টি কিছু’ বিক্রি হচ্ছে, তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। তবে ব্যবসার খাতিরে এটি বিজ্ঞাপনের মতো একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালেও সবাইকেই যে ভালোবেসে মিষ্টি দিতে নেই, তা ভুললে চলবে না।

কেন সবাইকে ‘মিষ্টি কিছু’ দিতে নেই

ফলমূলের মতো মিষ্টি খাবার, যাতে আছে প্রাকৃতিক চিনি, তা সাধারণত আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। কিন্তু কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, কুকি, বিস্কুট, ডোনাট, পায়েস, ফিরনি, সেমাই, জর্দা, জেলি, জ্যাম কিংবা মিষ্টি পানীয়—এসবে যে চিনি দেওয়া হয়, তা প্রক্রিয়াজাত। এসব সুস্বাদু হলেও আদতে স্বাস্থ্যকর নয়।

মিষ্টি কিছু তৈরিতে ব্রাউন সুগার বা নানা রকম সিরাপও ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। এসবও সাদা চিনির চেয়ে ভালো কিছু নয়। মধু, গুড় বা কৃত্রিম চিনি ব্যবহার করলেও তা খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না।

জীবনের নানা সাফল্য উদ্‌যাপনের আনুষ্ঠানিকতায়ও থাকে মিষ্টিমুখের আয়োজন

এসব উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা মিষ্টি খাবারের নেশায় আছে বিপদ। চিনি গ্রহণ করার পর কী হয়, জানেন? দ্রুতই তা ভেঙে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ে। অল্প সময় পরই তা রক্ত থেকে শোষিত হয়। একসময় মেদ হিসেবে জমা হয় দেহের নানা স্থানে।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাসে বাড়ে স্থূলতার ঝুঁকি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, ফ্যাটি লিভার আর স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। যাঁরা এ ধরনের কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে মিষ্টি খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলতে হবে তাঁদের।

বাকিদের জন্যই কি তবে সব মিষ্টি

যাঁরা দিব্যি সুস্থ আছেন, তাঁরা কি তবে ইচ্ছেমতো খাবেন মিষ্টি কিছু? নাহ্, একদমই নয়। অতিরিক্ত চিনি গ্রহণে কোন কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে, তা তো জানলেনই। তবে কোন বয়সে ঠিক কতটা মিষ্টি খাবার গ্রহণ করা উচিত, সে বিষয়ে পুষ্টিবিদেরা একেবারে ধরাবাঁধা নির্দেশনা দেন না।

কিন্তু এটা ঠিক যে জীবনের মিষ্টতা প্রাণভরে উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে সুস্থ থাকতে হবে। প্রিয়জনকেও রাখতে হবে সুস্থ।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাসে বাড়ে স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্‌রোগ, ফ্যাটি লিভার আর স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে

সব বয়সেই তাই চিনির মাত্রা কম রাখা উচিত। শিশুদেরও ইচ্ছেমতো চিনি খেতে বারণ করেন পুষ্টিবিদেরা। চিনি যে কেবল ‘ডেজার্ট’ বা মিষ্টান্নেই থাকে, তা-ও নয়। প্যাকেট বা কৌটার খাবারে চিনির মাত্রা লেখা থাকে। কেনার সময়ই দেখে নিন।

আর শর্করাজাতীয় অন্যান্য খাবার খাওয়ার পর সেসব ভেঙেও তৈরি হয় গ্লুকোজ। তাই খেয়াল রাখুন, বয়স ও শারীরিক শ্রম অনুযায়ী সারা দিনে মোট ক্যালরির পরিমাণ যেন ঠিক থাকে। তা ঠিক রাখতে গেলে কেউ ভালোবেসে মিষ্টি কিছু দিলেও পরিমিতিবোধ বজায় রাখতে হবে অবশ্যই।

একটুকরা কেক এগিয়ে দিলেন প্রিয়জন? একলা না খেয়ে ভাগ করে নিন। তাতে সম্পর্কের মিষ্টতাই বেড়ে যাবে বহুগুণ।