অ্যালার্জিজনিত সর্দি একটি নাকের সমস্যা যা নাসিকা ঝিল্লির সংক্রমণের ফলে হয়ে থাকে। মূলত এর পেছনে রয়েছে কিছু উদ্দীপকের ভূমিকা। দিনে দিনে এ রোগের ব্যাপ্তি বাড়ছে। যদিও অ্যালার্জিজনিত সর্দি মারাত্মক রোগ নয়, তবে এর কারণে দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহ ব্যাহত হয়।
কখনো কখনো অ্যালার্জি অসহনীয় বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে অ্যালার্জির প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। মাঝেমধ্যে এটি সামাজিক সমস্যাও সৃষ্টি করে। যেমন আপনি একটি অনুষ্ঠানে গেলেন, হঠাৎ করে শুরু হলো অসহ্য চুলকানি ও হাঁচি। আবার যদি হাঁচিসহ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, তখন তো এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।
ধুলাবালু, ফুলের রেণু, মাইট, খাদ্য। পশু-পাখির লোম ও পাখনা, পোকামাকড়ের হুল ও কামড়, রাসায়নিক পদার্থ, ওষুধ, কসমেটিকস, কন্টাক্ট অ্যালার্জেন ইত্যাদি। এ ছাড়া গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, শিল্পকারখানার বিভিন্ন উপাদানও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। বিশেষ কিছু পদার্থ যখন শরীরের সংস্পর্শে আসে, তখন শরীরে এক অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যেমন সর্দি, চুলকানি, ত্বক ফুলে যাওয়া, হাঁচি-কাশি ইত্যাদি। এসব অস্বাভাবিক উপসর্গই হলো অ্যালার্জি।
অ্যালার্জির সুচিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। নাকের অ্যালার্জি সর্দি থেকে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ রোগীর হাঁপানি হতে পারে। নাকের অ্যালার্জি সর্দি থেকে সাইনুসাইটিস, চোখের কনজাংটিভাইটিস, নাকের পলিপও হতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
অ্যালার্জির সঠিক চিকিৎসার জন্য কিছু ল্যাব-পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন রক্ত, প্রস্রাব ও মলের রুটিন পরীক্ষা, রক্তের সুগার, আইজিই অ্যান্টিবডি ইত্যাদি। প্রয়োজনে বুক, নাক ও সাইনাসের এক্স-রে করে দেখা যেতে পারে।
অ্যালার্জি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো কারণগুলো শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। বিশেষ করে রোগীকে খুব সতর্কতার সঙ্গে খুঁজে বের করতে হবে, তাঁর শরীরে কী কী কারণে অ্যালার্জি হয়। অ্যালার্জি চিকিৎসার বিভিন্ন ধাপ হলোÑহেলথ এডুকেশন, ওষুধপত্র ও অন্যান্য চিকিৎসা।
রোগের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস জানতে হবে এবং অ্যালার্জির প্রকৃত কারণ শনাক্ত করে পরবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে ডিসেনসিটাইজেশন করা যেতে পারে। তবে তা প্রচলিত আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সমন্বয় করে করতে হবে। এ রোগের চিকিৎসা অভিজ্ঞ অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে করতে হবে।
পূর্বে এমন ধারণা ছিল যে অ্যালার্জি হলে আর ভালো হয় না। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সে ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে। মনে রাখতে হবে যে হাতুড়ে চিকিৎসকের খপ্পরে পড়ে ভুল চিকিৎসা দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা সৃষ্টি করে, এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে। নিজে নিজে অথবা ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে অ্যালার্জির চিকিৎসা করা ঠিক নয়। চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ সেবন করলে অনেক সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী: ইএনটি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা